ফ্রিল্যান্সিং কি
ফ্রিল্যান্সার যে কাজগুলো সুনির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে সম্পন্ন করে থাকে তাকে ফ্রিল্যান্সিং বলে। অর্থাৎ কোন বিষয়ে দক্ষ ব্যক্তি যদি অনলাইনে তার দক্ষতার মাধ্যমে কাজ করে কোন অর্থ উপার্জন করে তাকে ফ্রিল্যান্সিং বলা হয়। ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে করা যায়। গতানুগতিক সময়ভিত্তিক কাজের মধ্যে ফ্রিল্যান্সিং পেশা সীমাবদ্ধ নয়।
সারাবিশ্বে এখন ইন্টানেট যথেষ্ট সহজলভ্য হয়ে ওঠায় ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ একটি নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ না থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ ক্রমেই ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। একটি কম্পিউটার এবং মোটামুটি গতির একটি ইন্টারনেট সংযোগ থাক বিশ্বের যে কোন স্থানে বসে ফ্রিল্যান্সিং করা সম্ভব। অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে যে কাজগুলো করার সুযোগ রয়েছে সেগুলো হলো: ডেটা এন্ট্রি, লেখালেখি করা, ছবি সম্পাদনা, টুডি বা থ্রিডি এনিমেশন তৈরি, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, ভিডিও তৈরি প্রভৃতি।
ফ্রিল্যান্সার কি
ফ্রিল্যান্সার হচ্ছে এমন একজন দক্ষ কর্মী যিনি কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে দীর্ষস্থায়ী চুক্তি ছাড়া কাজ করেন অনলাইনে বা অফলাইনে উভয় প্ল্যাটফর্মে বা যে কোন একটি প্ল্যাটফর্মে। এবং তার বিভিন্ন কাজের বিনিময়ে বিভিন্ন রকম অর্থ উপার্জন করেন। হতে পারে দেশীয় অর্থ হতে পারে বৈদেশিক মুদ্রা।
ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো
প্রথমে নিজেকে স্থির করতে হবে যে কোন দক্ষতার মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং করে অর্থ উপার্জন করব। বর্তমানে যেসব কাটাগরি থেকে মোটামুটি ভালো অর্থ উপার্জন করা যায়, সেগুলো হলো:
১। সফটওয়্যার বা এ্যাপস তৈরি করা
২। ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট করা
৩। গ্রাফিক্স ডিজাইন এর কাজ করা
৪। ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবে পাবলিশড করা ও গুগল এ্যাডসেন্স ব্যবহার করা
৫। এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) করা
৬। ওয়েবসাইট তৈরি করে তাতে গুগল এ্যাডসেন্স ব্যবহার করা বা এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করা
৭। কনটেন্ট রাইটিং করা
৮। ভার্চুয়াল এ্যাসিসটেন্ট এর কাজ করা
এছাড়া আরো হাজারো রকমের কাজ রয়েছে। উপরোক্ত বিষয়ের যেকোন একটিতে প্রথমে নিজেকে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। যেনতেন ভাবে দক্ষতা অর্জন করলে হবে না। পরিপূর্ণভাবে দক্ষ হতে হবে। এজন্য যে একটি বিষয়ে কোর্স করতে হবে। হোক সেটা অনলাইনে গুগল, ইউটিউব, অন্যকোন ওয়েবসাইট বা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেখানে কোর্স শেখানো হয়। শুধু শিখলেই কিন্তু দক্ষতা অর্জন করা হয় না। শেখার পর বাসায় অথবা কোন প্রতিষ্ঠানে ভালো করে শেখা বিষয়গুলো চর্চা করতে হবে প্র্যাকটিক্যাল কাজের মাধ্যমে। এভাবে কাজ করতে করতে দক্ষতা আসবে তারপরে অনলাইন মার্কেটপ্লেস অর্থা যেসব ওয়েবসাইটে কাজ পাওয়া যায় সেখানে নিজের নামে একাউন্ট তৈরি করতে হবে।
বি.দ্র: কোন ওয়েব সাইটে নিজের নামে একাউন্ট করে প্রোফাইল তৈরি করা বা কিভাবে প্রোফাইল তৈরি করতে হবে। কিভাবে ব্যাংক একাউন্ট এ্যাড করতে হবে। এগুলোকে ফ্রিল্যান্সিং বলে না। ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে কাজ শিখতে হবে আগে। ৩ মাস বা ৬ মাস বা ১ বছর বা ২ বছর সময় নিয়ে আগে নিজের যোগ্যতা বা দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। আর যথেষ্ট ধৈর্য্য ও সবসময় শেখার মানসিকতা থাকতে হবে।
ফ্রিল্যান্সিং কাজে বিবেচ্য বিষয়সমূহ:
ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার সময় নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে:
১। যে কাজগুলোতে যথেষ্ট দক্ষতা আছে সেই কাজগুলোর জন্য বিড করা / আবেদন করা।
২। বায়ারের পোস্টকৃত কাজে কী চাওয়া হচ্ছে সেটি ভালোভাবে পর্যালোচনা করতে হবে এবং উল্লিখিত সময়ের মধ্যে কাজটি করা সম্ভব হবে কিনা সেটি বিবেচনা করে অতঃপর কাজের জন্য বিড করতে হবে।
৩। কাজের জন্য অতিরিক্ত বেশি মূল্য বা কম মূল্য দিয়ে বিড / আবেদন করা যাবে না। একটি যৌক্তিক মূল্য উল্লেখ করে বিড প্রদান করতে হবে।
৪। পেমেন্ট সিস্টেম সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে।
৫। কাজটি সময়মতো সাবমিট/ জমা দিতে হবে।
ফ্রিল্যান্সিং কাজের যোগ্যতা বা একজন ফ্রিল্যান্সারের যেসব যোগ্যতা থাকা দরকার:
ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ করার জন্য প্রতিটি ব্যক্তিকেই তথা ফ্রিল্যান্সারকে কিছু যোগ্যতার অধিকারী হতে হয়। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো:
১। ফ্রিল্যান্সিংয়ে আগ্রহ ব্যক্তি যে ধরনের কাজ করতে ইচ্ছুক তাকে সে ধরনের কাজে পারদর্শী হতে হবে নতুবা কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। একটি কাজের বিপরীতে শত শত ফ্রিল্যান্সার কাজের আগ্রহ প্রকাশ করে বিডে/ আবেদনে অংশগ্রহণ করেন। এদের মধ্যে একজন বায়ার তার কাজের জন্য যোগ্য ব্যক্তিটিকে খুঁজে পেতে ইন্টারভিউ নেন। এতে উৎরে যেতে না পারলে কাজ পাওয়াটা দুরূহ হয়ে পড়ে।
২। কাজের ক্ষেত্রে যোগাযোগের মাধ্যম যেহেতু ইংরেজি সেহেতু ফ্রিল্যান্সারগণকে মোটামুটি মানের ইংরেজি জানা থাকতে হয়। যারা ভালো ইংরেজি জানেন তারা কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যদের চাইতে অনেক বেশি এগিয়ে থাকেন।
৩। যে মার্কেটপ্লেসে কাজের জন্য বিড/আবেদন/গিগ তৈরি করা হয় সেখানে ফ্রিল্যান্সারের প্রোফাইল যেন সমৃদ্ধ হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রোফাইলটিকে ভালো ভাবে সাজানোর চেষ্টা করতে হবে।
৪। নিজেকে বায়ারের সামনে ভালোভাবে তুলে ধরতে একজন ফ্রিল্যান্সারকে উন্নত কম্যুনিকেশন স্কিল দেখাতে হয়।
৫। কোনো বিডে জয়ী হয়ে কাজ পেলেই হলো না; সেই কাজটি ভালোভাবে সম্পন্ন করে যথাসময়ে বায়ারের কাছে সাবমিট করে দেবার মানসিকতা ও চেষ্টা থাকতে হবে।
৬। বায়ারকে ঠকানোর মানসিকা পরিহার করতে হবে।
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস সমূহ:
গুগলে সার্চ করলে বহু মার্কেটপ্লেস পাওয়া যাবে যারা ফ্রিল্যান্সিং কাজ পোষ্ট করে। কিন্তু তারমধ্যে মাত্র কয়েকটিই বিশ্বাসযোগ্য ও বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় যেমন:
1. https://www.upwork.com
2. https://www.fiverr.com
3. https://www.freelancer.com
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions