ভাবসম্প্রসারণ লেখার নিয়ম
ভাষার মাধুর্যময় আধারে ভাবের যথার্থ প্রকাশেই সাহিত্যিকের সিদ্ধি। কবি-সাহিত্যিকদের রচনায় অনেক সময় ভাব-সংহত বাক্য বা চরণ থাকে, যার মিত-অবয়বে লুক্কায়িত থাকে জীবন ও জগৎ সম্পর্কিত গূঢ় কথা, নিহিত থাকে ভূয়োদর্শনের শক্তি। ইঙ্গিতময়, রূপকাশ্রয়ী স্বল্প-বাক উক্তিগুলো বিশ্লেষণে বের হয়ে আসে জগৎজীবন সম্পর্কে বৃহৎ ভাব, জীবনের তত্ত্বদর্শন। এই ধরনের ভাবগূঢ় বাক্যগুলোর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণই হলো ভাব-সম্প্রসারণ। ভাবের সম্প্রসারণে বক্তব্য বিষয় স্পষ্ট ও বোধগম্য হয়ে ওঠে। যথাযথ শব্দ প্রয়োগ আর উপমা, দৃষ্টান্ত, তুলনা ইত্যাদির আশ্রয়ে ভাবের সম্প্রসারণের কাজটি সম্পন্ন করতে হয়।
ভাব-সম্প্রসারণের তিনটি অংশ-
(১) আভিধানিক অর্থ
(২) মূল ভাব
(৩) মূল ভাব প্রকাশের উপযোগী যুৎসই দৃষ্টান্ত।
ভাবসম্প্রসারণ লেখার নিয়ম সমূহ নিম্নরূপ:
১. বারংবার পাঠ করে উদ্ধৃত বাক্যের মর্মোদ্ধার করা প্রথম করণীয়।
২. বাক্যের অলংকারের আড়ালে নিহিত সারসত্য গভীরভাবে অনুধাবন করতে হবে।
৩. সহজ, সরল ও বাহুল্যবর্জিত বাক্য ব্যবহারে বিশ্লেষণ করতে হবে। প্রয়োজনানুসারে প্রাসঙ্গিকভাবে দৃষ্টান্ত, তথ্য ও উদ্ধৃতি ব্যবহার করতে হবে।
৪. উপমাত্মক বাক্যের ভাব-সম্প্রসারণে উপমান ও উপমেয় অংশকে দুটো অনুচ্ছেদে বিশ্লেষণ করা বাঞ্ছনীয়। প্রথম অনুচ্ছেদে থাকবে আক্ষরিক অর্থ, দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে ব্যঞ্জনার্থ।
৫. ভাব-সম্প্রসারণ হবে মূলভাবের অনুসারী, অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে পরিহার্য।
৬. প্রারম্ভিক বাক্যটি হবে সুসংহত, ঘনপিনদ্ধ ও শ্রুতিমধুর এবং ক্রিয়াপদ বিরহিত।
৭. নির্ভুল উক্তি ও প্রবাদ-প্রবচনের ব্যবহারে ভাব-সম্প্রসারণ হয়ে ওঠে সৌকর্যময়।
৮. উদ্ধৃতি ব্যবহারে লেখকের নাম ব্যবহার অবশ্যই পরিহার্য।
৯. সম্প্রসারিত ভাবের আয়তন ততটুকুই হবে, যতটুকুতে ভাবের প্রকাশ সম্পূর্ণতা পায়।
১০. বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি কঠোরভাবে পরিহার করতে হবে। এতে বক্তব্যের ভাব-গাম্ভীর্য ও ওজস্বিতা বিনষ্ট হয়।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions