ভাবসম্প্রসারণ পথ পথিকের সৃষ্টি করে না পথিকই পথের সৃষ্টি করে
পথ পথিকের সৃষ্টি করে না, পথিকই পথের সৃষ্টি করে।
ভাব-সম্প্রসারণ : পথ প্রকৃতির কোনো উপহার নয়; পথের সৃষ্টি মানুষের প্রয়োজনে, মানুষের পদচারণায়। পথ তৈরির ক্ষেত্রে পথের কোনো ভূমিকা নেই। দুর্গম জঙ্গলাকীর্ণ জমিনের ওপর দিয়ে মানুষ চলাচল করতে করতে পথের সৃষ্টি করেছে। যত বেশি মানুষের যত বেশি চলার প্রয়োজন হয়েছে পথ তত বেশি প্রশস্ত ও দীর্ঘ হয়েছে। এটাই পথ সৃষ্টির ইতিহাস। পথের জায়গা আগেই ছিল, কিন্তু পথ ছিল না; মানুষ চলার গতিকে স্বচ্ছন্দ ও আরামদায়ক করার প্রয়োজনেই পথ সৃষ্টি করেছে। মানুষ যেমন প্রয়োজনের তাগিদে পথ সৃষ্টি করেছে, তেমনি মানুষ জীবনযাপনকে সহজ, সুন্দর ও সাবলীল করার প্রয়োজনেই আবিষ্কারের নেশায় মেতে উঠেছে। প্রকৃতির মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিচিত্র উপাদান-উপকরণকে ব্যবহার করে সৃষ্টি করেছে বহু বিচিত্র জীবনোপকরণ। প্রকৃতিতে লোহা আগেই ছিল, কিন্তু কোনো যন্ত্রপাতি ছিল না। মানুষ তার নিজের প্রয়োজনেই মেধা ও শ্রমকে কাজে লাগিয়ে লোহা গলিয়ে বানিয়েছে বহু বিচিত্র ইঞ্জিন ও যন্ত্রপাতি। এভাবেই কঠোর পরিশ্রম, কর্তব্যনিষ্ঠা ও প্রাণান্ত চেষ্টায় মানুষ গড়ে তুলেছে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে পরিপূর্ণ সভ্য জীবন। মানুষ যখনই কোনো সংকটে পড়েছে, তখনই মনন ও শ্রম দিয়ে তা কাটিয়ে উঠার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। প্রকৃতির বৈরিতার কাছে মানুষ কখনো হার মানেনি; মানুষের অপরাজেয় মানসিকতা ও দুর্দমনীয় সংগ্রামের কাছে প্রকৃতি বশীভূত হয়েছে। পথ যেমন একদিনে তৈরি হয়নি, শত শত মানুষের নিরন্তর পদচারণায় তৈরি হয়েছে পথ, তেমনি মানবসভ্যতার উৎকর্ষ ও বিকাশের পেছনে রয়েছে অগণিত মানুষের শ্রম, অধ্যবসায়, নিরন্তর গবেষণা ও আবিষ্কারের প্রয়াস। মানুষের কোনো অর্জনই সুলভ নয়; মানুষের সকল অর্জনের মূলে রয়েছে তার সর্বজয়ী মানসিকতা ও কঠোর শ্রম; হয়তো অনেক অর্জনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অপরিমিত রক্তঝরার ইতিহাস। কোনো বাধার সামনেই মানুষ থমকে দাঁড়ায়নি; চলার পথের প্রতিকূলতাকে জয় করার জন্য গভীর নিষ্ঠায় নতুন পথ সন্ধান করেছে। তাই বলা যায়, পথিকই অগ্রগামী, পথ পথিকের অনুগামী মাত্র।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions