শিল্প বিপ্লব কি
শিল্প বিপ্লব কি : শিল্পবিপ্লবকে সহজ ভাষায় শিল্প সংশ্লিষ্ট বিপ্লব বলে অভিহিত করা যায়। বিপ্লব শব্দটি দ্বারা কোনো ক্ষেত্রের মৌল পরিবর্তনকে বুঝায়। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় শিল্প সংশ্লিষ্ট যে মৌলিক পরিবর্তন ঘটেছে, যা উৎপাদন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে বদলে দিয়েছে তাকে বিপ্লব বলাই শ্রেয়। শিল্পবিপ্লব সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবেদীন কাদের বলেন, ১৭৬০ থেকে ১৮৫০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে একটা সুদূর প্রসারী ও দীর্ঘ সময়ব্যাপী সামাজিক বিপ্লব বিশ্বের অর্থনীতি, রাজনীতি এবং চিন্তাধারায় আমূল পরিবর্তন বয়ে আনে। আর এ ধরনের পরিবর্তন মানব সভ্যতার ইতিহাসে আগে দেখা যায়নি। এর ফলে বদলে গেছে পৃথিবীর বাহ্যিক চেহারা, মৌল কাঠামোতে এসেছে পরিবর্তন। মানুষের জীবনাচারণ ও জীবনযাপন রীতিতে এসেছে বিরাট এক ভিন্নতা।
শিল্পবিপ্লব সম্পর্কে Professor Lady Williams বলেন, অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষার্ধ থেকে উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত জ্ঞান বিজ্ঞানের দ্রুত উন্নয়ন এবং উৎপাদন ক্ষেত্রে তার ব্যবহারের ফলে মানব জীবন যাত্রার যে পরিবর্তন এসেছে তাই শিল্পবিপ্লব।
The New Encyclopedia of Britannica তে বলা হয়েছে, শিল্পবিপ্লব হচ্ছে কৃষিভিত্তিক হস্তশিল্পনির্ভর অর্থনীতি থেকে যন্ত্রচালিত উৎপাদন ব্যবস্থায় পরিবর্তনের একটি প্রক্রিয়া; যা অষ্টাদশ শতকে ইংল্যান্ডে শুরু হয়ে বিশ্বের অন্যান্য অংশে বিস্তার লাভ করে।
সমাজকল্যাণ অভিধানের সংজ্ঞানুযায়ী, শিল্পবিপ্লব হলো অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনাদি, যা অষ্টদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে কারখানা ব্যবস্থায় সূচনা ঘটেছে।
১৭৬০ সাল থেকে ১৮৫০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে সুদূর প্রসারী ও দীর্ঘ সময়ব্যাপী সামাজিক বিপ্লব বিশ্বের অর্থনীতি, রাজনীতি এবং শিল্প প্রসারে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার মাধ্যমেই শিল্পবিপ্লবের গতিময়তা বৃদ্ধি পায়। আর শিল্পবিপ্লব প্রত্যয়টির নামকরণ করেন আরনল্ড টয়েনবি।
২.৬.২ শিল্পবিপ্লবের বৈশিষ্ট্য
শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপট, কারণ, ধরন, প্রকৃতি এবং প্রভাব পর্যালোচনায় এর নিম্নরূপ বৈশিষ্ট্যগুলো সুস্পষ্ট হয়ে উঠে :
১. প্রযুক্তিনির্ভর উৎপাদন : উৎপাদন, যোগাযোগ, পরিবহন প্রভৃতি ক্ষেত্রে কায়িক শ্রমের পরিবর্তে শক্তিচালিত যন্ত্রের ব্যবহার প্রয়োগ করা হয়।
২. মানব সভ্যতার দুটি ভাগ : শিল্পবিপ্লব এর আগে ও পরের মানব সভ্যতার মধ্যে পুরোপুরি সীমারেখা টেনে পৃথক করে দেয় ।
৩. পুঁজিবাদী অর্থনীতির বিকাশ : সামন্তবাদের স্থলে পুঁজিবাদের প্রতিস্থাপন হয়। কৃষিভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থার পরিবর্তে শিল্পভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থার বিকাশ।
৪. বৃহদায়তন শিল্পের আবির্ভাব : গৃহকেন্দ্রিক ক্ষুদ্রাকৃতির উৎপাদন প্রক্রিয়ার পরিবর্তে বৃহৎ আকারে যন্ত্রচালিত উৎপাদন প্রক্রিয়ার সূচনা হয় ।
৫. উৎপাদন ব্যয় কম : শিল্পবিপ্লবের ফলে কায়িক শক্তির পরিবর্তে যান্ত্রিক শক্তির ব্যবহার এবং কম সময়ে ব্যাপক উৎপাদনের ফলে উৎপাদন ব্যয় কমে যায়।
৬. আমূল পরিবর্তন : উৎপাদন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের ফলে জীবনযাত্রার ব্যাপক পরিবর্তন সংঘটিত হয়।
৭. শিল্পভিত্তিক অর্থনীতি : কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির পরিবর্তে দ্রুত শিল্পভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে উঠে।
৮. মজুরিভিত্তিক শ্রম : কাজের দক্ষতা ও যোগ্যতা অনুসারে শ্রমের মজুরি নির্ণীত হয় ।
৯. প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টি : বৃহদায়তন শিল্পের ফলে একই পণ্য বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন মানে উৎপাদিত হওয়ায় প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়।
১০. কৃষির আধুনিকীকরণ : প্রাচীন আমলের লাঙ্গল জোয়াল আর প্রকৃতিনির্ভর সেচ ব্যবস্থার পরিবর্তে ট্রাক্টর, পাওয়ার ট্রিলার, গভীর নলকূপ ইত্যাদি উদ্ভব হওয়ায় কৃষির আধুনিকীকরণের মাধ্যমে উৎপাদন প্রসার ঘটেছে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions