অবাধ বাণিজ্য কি?
যদি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমদানী ও রপ্তানীর উপর কোনরূপ বাধা নিষেধ আরোপ করা হয় তাহলে এরূপ বাণিজ্যকে অবাধ বাণিজ্য বলে। অবাধ বাণিজ্যে পণ্য অবাধে এক | দেশ থেকে অন্য দেশে গমনাগমন করে। প্রত্যেক দেশ অবাধে পণ্য আমদানী করে তার চাহিদা মেটাতে পারে এবং প্রত্যেক দেশের রপ্তানী অবাধে অন্যদেশে প্রবেশ করতে পারে।
অবাধ বাণিজ্যের সপক্ষে যুক্তিসমূহ :
অবাধ বাণিজ্যের সপক্ষে নিম্নলিখিত যুক্তিগুলো দেখানো হয়ে থাকে :
ক. আন্তর্জাতিক বিশেষায়ন : প্রত্যেক দেশের সম্পদ ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য থাকে। সুতরাং প্রত্যেক দেশ বিভিন্ন পণ্য বিভিন্ন খরচে উৎপাদন করতে পারে। একটি দেশ অন্য দেশের তুলনায় কম খরচে যে সব পণ্য উৎপাদন করতে পারে সেসব পণ্য উৎপাদন করা উচিত এবং এসব পণ্য বিনিময় করে যেসব পণ্যের উৎপাদন খরচ বেশি সেসব পণ্য আমাদনী করা উচিত। এভাবে বিশেষায়নের ফলে প্রত্যেক দেশ তার সীমিত সম্পদ থেকে বেশি | পরিমাণে আয় লাভ করতে সক্ষম হয়।
খ. অবাধ বাণিজ্য ও দক্ষতা : বাণিজ্যে বাধানিষেধ আরোপ করলে তা দক্ষতা ক্ষতি সৃষ্টি করে। আমদানীর উপর শুল্ক আরোপ করলে ভোক্তাদেরকে বেশি দাম দিয়ে পণ্যটি ভোগ করতে হয়। আবার পণ্যটি উৎপাদনে এই দেশের তুলনামূলক অসুবিধা থাকায় এটি উৎপাদনে বিদেশের তুলনায় বেশি পরিমাণ উপকরণ ব্যবহৃত হয় অর্থাৎ সম্পদের অদক্ষ ব্যবহার হয়। অবাধ বাণিজ্য এসব ক্ষতি দূর করে এবং জাতীয় কল্যাণ বৃদ্ধি করে।
গ. অবাধ বাণিজ্য ও উৎপাদন খরচ : সংরক্ষণের ফলে শিল্পে প্রতিযোগিতা হ্রাস পায় এবং মুনাফা বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত মুনাফার সুযোগ নেয়ার জন্য দেশীয় বাজার ছোট হওয়া সত্ত্বেও অনেক ফার্ম পণ্যটি উৎপাদন করে। ফলে অর্থনীতি বর্ধিত উৎপাদনজনিত ব্যয়-সংকোচ এর সুবিধা লাভে বঞ্চিত হয়। অবাধ বাণিজ্যে প্রতিযোগিতার ফলে অদক্ষ ফার্ম শিল্প ত্যাগ করে এবং স্বল্প সংখ্যক দক্ষ ফার্ম উৎপাদনে নিয়োজিত থাকে। উৎপাদনের ক্রমবর্ধমান মাত্রাগত প্রতিদানের কারণে স্বল্প সংখ্যক ফার্ম অনেক পরিমাণ পণ্য উৎপাদন করায় উৎপাদন খরচ কম পড়ে।
ঘ. রাজনৈতিক যুক্তি : কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে শুল্ক ও রপ্তানী ভুর্তকী জাতীয় কল্যাণ বৃদ্ধি করে। কিন্তু সংরক্ষণ ও ভর্তুকী যেসব ক্ষেত্রে ব্যবহার করা উচিত বিশেষ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর | তৎপরতার জন্য সরকার সেসবক্ষেত্রে এগুলোর ব্যবহার করতে পারে না। বরং বিশেষ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী যেসব ক্ষেত্রে সংরক্ষণ বা ভর্তুকী দাবী করে সেসব ক্ষেত্রে এগুলো ব্যবহার করতে হয়। ফলে অর্থনীতির কল্যাণ হ্রাস পায়। এজন্য সাধারণভাবে অবাধ বাণিজ্য নীতি অনুসরণ করা উচিত যাতে কোন বিশেষ গোষ্ঠী চাপ দিয়ে সরকারের কাছে অনাকাংক্ষিত সুবিধা আদায় করতে না পারে।
অবাধ বাণিজ্যের বিপক্ষে যুক্তিসমূহ:
অবাধ বাণিজ্যের বিপক্ষে নিম্নলিখিত যুক্তিসমূহ দেখানো হয়ে থাকে :
ক. বাণিজ্য শর্ত যুক্তি ও অবাধ বাণিজ্যনীতি অনুসরণ না করে কাম্য শুল্ক ও রপ্তানী কর আরোপ করে একটি দেশ তার বাণিজ্য শর্তের উন্নতি করতে সক্ষম হয়। তবে বাস্তব ক্ষেত্রে এযুক্তিটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ ছোট দেশসমূহ তাদের আমদানী ও রপ্তানীর দাম প্রভাবিত করতে পারে এবং ফলে শুল্ক বা অন্যান্য নীতির মাধ্যমে তাদের বাণিজ্য শর্তের উন্নতি করতে পারে না। বড় দেশগুলো তাদের আমদানী ও রপ্তানরি দাম প্রভাবিত করতে পারে। কিন্তু তারা শুল্ক আরোপ করলে পাল্টা ব্যবস্থা হিসাবে অন্য দেশও এরূপ ব্যবস্থা নিতে পারে।
খ. দেশীয় বাজার ব্যর্থতার যুক্তি ও যদি কোন দেশীয় বাজার যথাযথভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে এরূপ ক্ষেত্রে অবাধ বাণিজ্য নীতি ত্যাগ করা অর্থনীতির জন্য সঠিক কল্যাণকর হতে পারে। যেমন- মনে করি, দেশের শ্রম বাজার যথাযথভাবে কাজ করে না (বেকারত্ব থাকতে পারে) এরূপ অবস্থায় সরকার শ্রম বাজারের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য বাণিজ্যে সংরক্ষণ নীতি অনুসরণ করতে পারে। তবে বাজার ব্যর্থতা সমস্যা নিরসনের জন্য বাণিজ্য নীতি ব্যবহার না করে বিশেষ বাজারের জন্য নির্দিষ্ট নীতি ব্যবহার করা শ্রেয়। যেমন-শ্রম বাজারে নিয়োগ বৃদ্ধির জন্য আর্থিক বা রাজস্ব নীতি নেয়া যায়।।
গ. অনুন্নত দেশসমূহের ক্ষেত্রে যুক্তি ও অবাধ বাণিজ্য অনুন্নত দেশের শিল্পায়নের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে। কারণ, এসব দেশের নতুন শিল্প উন্নত দেশের প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত এবং প্রতিষ্ঠিত শিল্পের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে না। এজন্য শিশু শিল্পকে সংরক্ষণ করা উচিত। অনেকের মতে বর্তমান আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা অন্যায্য এবং উন্নত বিশ্বের সম্পদের কারণে অনুন্নত বিশ্বে দারিদ্র বিদ্যমান। অসব উন্নয়নের কুফল থেকে রক্ষা করার জন্য অনুন্নত দেশসমূহের অবাধ বাণিজ্য নীতি ত্যাগ করা প্রয়োজন।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions