সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদের পার্থক্য
এ সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদের ধারণা বিশ্লেষণ করলে এদের মধ্যকার যেসব পার্থক্য দেখা যায়, সেগুলো নিম্নে বর্ণিত হল:
১। কল্যাণের প্রাধান্য: সমাজতন্ত্রে রাষ্ট্রের কল্যাণের প্রতি অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়। এ ব্যবস্থায় বলা হয়, রাষ্ট্রের কল্যাণ হলেই ব্যক্তির কল্যাণ হবে। অন্যদিকে, পুঁজিবাদে ব্যক্তির কল্যাণকে প্রাধান্য দেয়া হয়। এ ব্যবস্থায় ধরে নেয়া হয় ব্যক্তির কল্যাণ হলেই রাষ্ট্রের কল্যাণ হবে।।
২। উৎপাদন ও বন্টন: সমাজতন্ত্রে উৎপাদনের উপাদানসমূহ ও উৎপাদিত দ্রব্যের বন্টন ব্যবস্থা রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে হয়। অন্যদিকে, পুঁজিবাদে উৎপাদনের উপায়সমূহ ব্যক্তি মালিকানাভিত্তিক।
৩। সম্পত্তির মালিকানা: সমাজতন্ত্রে সকল সম্পদ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন থাকে। অন্যদিকে, পুঁজিবাদে সম্পত্তি ব্যক্তি মালিকাধীন থাকে।
৪। প্রতিযোগিতা: সমাজতন্ত্রে একমাত্র উৎপাদক রাষ্ট্র। যার দরুণ এ ব্যবস্থায় অবাধ প্রতিযোগিতা অনুপস্থিত। আবার, পুঁজিবাদে বহু সংখ্যক উৎপাদক থাকে। ফলে তাদের মধ্যে অবাধ প্রতিযোগিতা বিদ্যমান।
৫। ভোগের স্বাধীনতা: সমাজতন্ত্রে ভোক্তার স্বাধীনতা নেই বললেই চলে। কারণ এ ব্যবস্থায় রাষ্ট্র প্রদত্ত উৎপাদিত দ্রব্য ক্রয় করতে হয়। তবে পুঁজিবাদে কোন দ্রব্য কি পরিমাণ ভোগ বা ক্রয় করবে ব্যক্তি তা নিজে ঠিক করে।
৬। সর্বাধিক মুনাফা: সমাজতন্ত্রে সর্বাধিক মুনাফার পরিবর্তে সর্বাধিক কল্যাণ সাধন ও মৌলিক চাহিদা পূরণে গুরুত্ব দেয়া হয়। পুঁজিবাদে মুনাফাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
৭। সমতা: সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মানুষে-মানুষে শ্রেণিগত ব্যবধান দুর করার চেষ্টা থাকে। পক্ষান্তরে, পুঁজিবাদে শ্রেণি বৈষম্য থাকে। কারণ এ ব্যবস্থায় অধিক মুনাফার স্বার্থে পুঁজিপতিরা অল্প ব্যয়ে উৎপাদন করতে চায়। এজন্য শ্রমিকদের মজুরি কম দেয়া হয়। পরিণামে মালিক শ্রেণি ক্রমাগত সম্পদশালীতে পরিণত হয়, আর শ্রমিক শ্রেণি দরিদ্র হতে থাকে।
৮। ব্যয়ের দিক থেকে: সমাজতন্ত্রে প্রতিযোগিতা না থাকায় বিজ্ঞাপন বা বিক্রয়কর্মী নিয়োগ করতে হয় না। এর ফলে অর্থের অপচয় কম। পুঁজিবাদে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়।
৯। কাজের চাপ: সমাজতন্ত্রে রাষ্ট্রের উপরে সীমাহীন কাজের চাপ থাকে বিধায় সরকারি কার্যক্রমে ধীর গতি পরিলক্ষিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অন্যদিকে, পুঁজিবাদে ব্যক্তি মালিকানা ব্যবস্থা চালু থাকায় রাষ্ট্র তুলনামূলকভাবে কম চাপের মধ্যে থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে।
পরিশেষে বলা যায়, সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদের দোষ-গুন উভয়ই রয়েছে। তবে আধুনিক বিশ্বে সমাজতন্ত্রের তুলনায় পুঁজিবাদের প্রচলন অধিক। পুঁজিবাদের নানা ত্রুটির কারণে উত্তর-উপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলোর অনেকেই একসময় মিশ্র অর্থনীতি গ্রহণ করেছিল। উল্লেখ্য মিশ্র অর্থনীতিতে সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদ উভয়ের বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়। পরবর্তীকালে অবশ্য মিশ্র অর্থনীতির রাষ্ট্রগুলোর প্রায় সকলেই পুঁজিবাদী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions