সরকারের অঙ্গ কয়টি
রাষ্ট্র একটি বিমূর্ত ধারণা। রাষ্ট্রকে বাস্তবে দেখা যায় না। রাষ্ট্রকে উপলব্ধি করা যায় এর অন্যতম উপাদান সরকারের মাধ্যমে। রাষ্ট্রের অন্য তিনটি উপাদান হচ্ছে নাগরিক, ভূখন্ড ও সার্বভৌমত্ব। রাষ্ট্র তার সার্বভৌম ক্ষমতা সরকারের মাধ্যমে প্রয়োগ করে। আর সরকার গঠিত হয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে। সরকার ব্যতীত কোন রাষ্ট্র কল্পনা করা যায় না। সরকার সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি বা কৌশল তৈরি করে। সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা,
জনগণের নিরাপত্তা প্রদান, জনগণের অধিকার রক্ষা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা, জনকল্যাণ সাধন, ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণসহ রাষ্ট্রের সামগ্রিক কল্যাণ সাধন করে থাকে। তাই সরকারকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রের কথা চিন্তাই করা যায় না। এরিস্টটল সরকারের কার্যাবলিকে যে তিনভাবে ভাগ করেছেন তা হল- সিদ্ধান্তমূলক, শাসন সংক্রান্ত ও বিচার সংক্রান্ত। এ তিন ধরণের কার্যসম্পাদনের জন্য সরকারের তিন প্রকার ক্ষমতাও রয়েছে। এগুলো হচ্ছে আইন বিষয়ক ক্ষমতা, শাসন বিষয়ক ক্ষমতা ও বিচার বিষয়ক ক্ষমতা। প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সরকার নিজস্ব তিনটি বিভাগের সাহায্যে যাবতীয় কার্য সম্পাদন করে।
সরকারের এ তিনটি বিভাগ বা অঙ্গসমূহ হল—
(i) আইন বিভাগ (The Legislative)
(ii) শাসন বিভাগ (The Executive)
(iii) বিচার বিভাগ (The Judiciary)
সরকারের যে বিভাগ আইন প্রণয়ন, পরিবর্তন ও সংশোধন করে তাকে আইন বিভাগ বলে। আইন বিভাগ কর্তৃক প্রণীত আইনকে যে বিভাগ বাস্তবায়িত করে সে বিভাগকে শাসন বিভাগ বা নির্বাহী বিভাগ বলে। রাষ্ট্রের সকল ধরনের প্রশাসনিক কাজকর্ম শাসন বিভাগ দ্বারা সম্পাদিত হয়। সরকারের যে বিভাগ বিচারিক কার্য সম্পাদন করে তাকে বিচার বিভাগ বলে। অন্যভাবে বলা যায়, সরকারের যে বিভাগ দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী অপরাধীকে শাস্তি প্রদান করে এবং জনগণের অধিকার রক্ষা করে তাকে বিচার বিভাগ বলে। বিচার বিভাগ স্বাধীন, নিরপেক্ষ থাকলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। সংবিধান সমুন্নত রাখা বিচার বিভাগের অন্যতম দায়িত্ব।
সংসদীয় শাসন ব্যবস্থাতে আইন সভাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের হাতেই রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে। বিচার বিভাগ উভয় বিভাগের নিয়ন্ত্রনের বাইরে থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করে। পক্ষান্তরে, রাষ্ট্রপ্রধান শাসিত ব্যবস্থাতে ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ নীতি চালু থাকে। এই নীতি মোতাবেক, প্রত্যেকটি বিভাগ যার যার অবস্থান থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করে। আবার তিনটি বিভাগ যাতে করে স্বাধীনভাবে কাজ করতে যেয়ে স্বেচ্ছাচারী না হয়ে উঠতে পারে, সেজন্য রাষ্ট্রপ্রধান শাসিত ব্যবস্থাতে ক্ষমতার ভারসাম্য নীতি চালু থাকে। এ নীতি চালু থাকলে সরকারের কোন একটি বিভাগ স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতে চাইলে, অন্য দুই বিভাগের মাধ্যমে এর রাশ টেনে ধরার ব্যবস্থা থাকে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions