ক্ষমতার ভারসাম্য নীতি
সরকারের সুষ্ঠু কার্যক্রমের জন্য ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ অনস্বীকার্য। আবার এই নীতির আক্ষরিক অনুশীলন, সরকারের তিনটি বিভাগকে স্বেচ্ছাচারী করে তোলার ঝুঁকি তৈরি করে। এই ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান প্রণেতারা সরকারের বিভাগগুলোর স্বৈরাচারী প্রবণতা রোধ, পারস্পরিক নিয়ন্ত্রণ সংরক্ষণ এবং পারস্পরিক ভারসাম্য বজায় রাখার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিলেন। এ উদ্দেশ্য সামনে রেখেই নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যের নীতি প্রবর্তিত হয়। মার্কিন সংবিধানের বিভিন্ন অংশে নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যের নীতির উল্লেখ প্রয়োগ পরিলক্ষিত হয়।
নিম্নে নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যের নীতি আলোচনা করা হল-
১। আইন বিভাগের উপর নিয়ন্ত্রণ:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আইন সভা অর্থাৎ কংগ্রেসের কার্যাবলি উপর নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যের নীতির প্রয়োগ করা হয়েছে। সংবিধান মোতাবেক মার্কিন রাষ্ট্রপ্রধান কংগ্রেসের অধিবেশন আহবান করতে পারেন। আইন প্রণয়নের যাবতীয় ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে ন্যস্ত আছে। কিন্তু রাষ্ট্রপ্রধান আইন প্রণয়নের অনুরোধ সম্বলিত বাণী কংগ্রেসে পাঠাতে পারেন। রাষ্ট্রপ্রধান এই বাণী কংগ্রেসকে আলোচনা করতে হয়। তবে কংগ্রেস রাষ্ট্রপ্রধানের বানীর বিষয়বস্তু প্রত্যাখান করতে পারে। আবার রাষ্ট্রপ্রধান স্বাক্ষর ছাড়া কংগ্রেস কর্তৃক পাস করা বিল আইনে পরিণত হয় না। কংগ্রেসে পাস হওয়া বিলকে ‘ভেটো' প্রয়োগ করে রাষ্ট্রপ্রধান আটকে দিতে পারেন। আবার কংগ্রেস কর্তৃক প্রণীত আইনের বৈধতা বিচার করে দেখার ক্ষমতা আদালতের হাতে দেয়া আছে। বিচার্য আইনটি সংবিধান বিরোধী হলে আদালত অসাংবিধানিকতার দায়ে তা বাতিল করে দিতে পারে।
২। শাসন বিভাগের উপর নিয়ন্ত্রণ:
মার্কিন শাসন বিভাগের চূড়ান্ত ক্ষমতা রাষ্ট্রপ্রধানের উপর ন্যস্ত আছে। রাষ্ট্রপ্রধান কিন্তু কংগ্রেস ও সুপ্রীম কোর্টের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত নন। রাষ্ট্রপ্রধানের কার্যকাল চার বছর কিন্তু এই মেয়াদ অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই কংগ্রেস রাষ্ট্রপতিকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে অভিশংসনের মাধ্যমে পদচ্যুত করতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শাসনকার্য পরিচালনার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ দরকার হয় কিন্তু কংগ্রেস অনুমোদন না করলে সরকারি তহবিল থেকে অর্থ ব্যয়, কোন কর আরোপ বা বিলোপ করা যায় না। আইন প্রণয়নের ব্যাপারে যাবতীয় ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতেই ন্যস্ত আছে।
৩। বিচার বিভাগের উপর নিয়ন্ত্রণ:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগও অন্য দুটি বিভাগের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত নয়। রাষ্ট্রপতি সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতিদের নিযুক্ত করেন। এই নিযুক্তি সিনেটের অনুমোদন সাপেক্ষ। এই নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিচার বিবেচনার প্রভাবকে অস্বীকার করা যায় না। আবার কংগ্রেস সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতির সংখ্যা নির্ধারণ করতে পারে। তাছাড়া কংগ্রেস সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিষয়ক ক্ষমতা, জাতীয় আদালতসমূহের এখতিয়ার, বিভিন্ন অধঃস্তন জাতীয় আদালত গঠন ও বিলোপ প্রভৃতি বিষয়ে ক্ষমতা ভােগ করে। সর্বোপরি বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত রোধ এবং বিধি-নিষেধ আরোপের উদ্দেশ্যে কংগ্রেস আইন প্রণয়ন করতে পারে।
পরিশেষে বলা যায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে যুগপৎ ‘ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ’ ও ‘ক্ষমতা ভারসাম্যের’ নীতিকে বিশেষ গুরুত্বসহকারে অনুসরণ করা হয়েছে। এর ফলে সরকারের তিনটি বিভাগের প্রত্যেকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, আবার স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠা থেকে বিরত থাকে। এছাড়া এই দুই নীতির প্রয়োগের ফলে কোন বিভাগ এককভাবে প্রভাবশালী হওয়ার পরিবর্তে প্রত্যেক বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য বিরাজ করে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions