নেতৃত্বের গুণাবলী কি কি
মার্ক মিলার মনে করেন, “আত্মসংযম, সাধারণ জ্ঞান, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, ন্যায়পরায়ণতা, সৎ সাহস, বিশ্বাস ও আনুগত্য প্রভৃতি একজন যোগ্য নেতার গুণাবলি।” অধ্যাপক মিশেলস বলেন, “নেতৃত্ব হচ্ছে ইচ্ছাশক্তি, বিস্তৃত জ্ঞান, বিশ্বাসের দৃঢ়তা ও স্বয়ংসম্পূর্ণতা।” দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের মতে, “নেতৃত্বের অপরিহার্য গুণ হল আত্মবিশ্বাস, সার্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা ও দ্রুত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষমতা।” নিম্নে নেতৃত্বের প্রয়ােজনীয় গুণাবলি উল্লেখ করা হল।
১। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব : নেতাকে অবশ্যই আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী হওয়া উচিত। চারিত্রিক দৃঢ়তা, মাধুর্য, তেজস্বিতা, নমনীয়তা, বাগ্মীতা প্রভৃতি গুণের মাধ্যমে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশ হয়। ব্যক্তিত্বই একজন মানুষকে নেতৃত্বের পদে অধিষ্ঠিত হতে সাহায্য করে।
২। বুদ্ধিমত্তা : বুদ্ধিমত্তা নেতার আবশ্যকীয় গুণ। নেতা তার তীক্ষ্ণ বোধশক্তি দিয়ে সমস্যা সমাধান করে জনগণের নিকট সম্মান ও শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারেন। নির্বোধ ও বুদ্ধিমত্তাহীন ব্যক্তি ভালো নেতা হওয়ার যোগ্যতা রাখে না।
৩। শিক্ষা : শিক্ষা মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনা বৃদ্ধি করে। যার জন্য নেতাকে নিজস্ব বিষয়ে শিক্ষা ও প্রজ্ঞার অধিকারী হতে হবে। তাকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিষয়ে সমসাময়িক ঘটনাবলী সম্পর্কে অবহিত থাকতে হয়। একজন অশিক্ষিত ব্যক্তি জনগণের ভালো নেতা হতে পারেন না।
৪। মানসিক : দৈহিক সুস্থতা ও মানসিক ও দৈহিক সুস্থতা ব্যতীত কোন ব্যক্তি নেতা হতে পারেন না। নেতাকে অবশ্যই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে। সুস্বাস্থ্য ছাড়া নেতা কঠিন দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। নেতার কর্ম দক্ষতা ও কষ্ট সহিষ্ণুতা নির্ভর করে তার মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার উপর।
৫। অভিজ্ঞতা : যিনি যে বিষয়ে নেতৃত্ব প্রদান করবেন তাকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ হতে হবে। অভিজ্ঞতা ব্যতীত যে কোন কর্ম পরিকল্পনা পরিপূর্ণ রূপে বাস্তবায়ন করা কষ্টসাধ্য। কেননা নেতার কর্ম কল্পনার উপর দেশ ও জাতির সামগ্রিক কল্যাণ নির্ভর করে।
৬। বাগ্মিতা ও উত্তম শ্রোতা : বাগ্মিতা নেতার অন্যতম গুণ। নেতা ভালো বক্তৃতা দানে সক্ষম হলে শ্রোতারা তার কথা আগ্রহের সাথে শ্রবণ করেন। বাগি নেতা জনগণের মন জয় করে নিতে পারেন। ভালো বক্তৃতাদানের সাথে একজন নেতাকে জনগণের কথা মনযোগের সাথে শুনতে হবে এবং সেরকম পদক্ষে গ্রহণ করতে হবে।
৭। দূরদৃষ্টি : দূরদৃষ্টি সম্পন্ন একজন নেতা ভবিষ্যতের সমস্যার ব্যাপারে আগে থেকে ধারণা করায় সক্ষম থাকেন। ভবিষ্যতের সমস্যার সম্ভাব্য সমাধানের ব্যাপারে তিনি চিন্তা করতে পারেন। এমন গুনাবলি সম্পন্ন নেতা যে কোন রাষ্ট্র বা সমাজের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।
৮। ধৈর্য ও সহনশীলতা : নেতাকে অবশ্যই ধৈর্য ও সহনশীল হতে হয়। যে কোন জটিল পরিস্থিতি নেতাকে ধৈর্য, সাহস ও সহনশীলতার মাধ্যমে মোকাবেলা করতে হয়।
৯। নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি : একজন ভালো নেতা কখনো আংশিক জনগোষ্ঠীর হতে পারে না। তিনি সার্বজনীন নেতা। তাই | তাকে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকলের কাছে নিরপেক্ষ হিসাবে বিবেচিত হতে হবে।
১০। দেশপ্রেম : একজন নেতাকে অবশ্যই দেশপ্রেমিক হতে হবে। দেশদ্রোহী কোন কর্মকান্ডের সাথে তিনি যেমন সম্পৃক্ত হবেন না, তেমনি তার অনুসারীদেরকেও এধরনের কর্মকান্ড থেকে বিরত রেখে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করবেন।
১১। দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা : নেতাকে অনেক সময় তাৎক্ষণিক সংকট মোকাবেলার জন্য দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এধরণের সিদ্ধান্ত নিতে পারার সক্ষমতা জাতিকে সংঘাতময় পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করতে পারে।
১২। ন্যায়পরায়ণতা : নেতাকে ন্যায়পরায়ণ হতে হবে। তিনি হবেন ন্যায়-নীতির প্রতীক। সকল শ্রেণির মানুষের কাছে তিনি সমান গ্রহণযোগ্য হবেন। তিনি হবেন উন্নত সৎ চরিত্রের অধিকারী।
১৩। উদারতা : নেতা হবেন উদার মনের অধিকারী। নেতাকে ব্যক্তি স্বার্থ পরিহার করে সর্বজনের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে। নেতাকে সংকীর্ণতা, দীনতা, পরশ্রীকাতরতা, স্বার্থপরতা ও হীনমন্যতা ত্যাগ করতে হবে।
১৪। প্রতিশ্রুতি রক্ষা : নেতাকে অবশ্যই তার প্রদেয় প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে। বিশেষ করে নির্বাচনের প্রাক্কালে জনগণের নিকট দায়বদ্ধ প্রতিশ্রুতি নেতাকে পূরণ করতে হবে। অর্থাৎ নেতাকে তার কথা ও কাজের মিল রাখতে হবে।
১৫। আত্মবিশ্বাসী : নেতার অন্যতম গুণ আত্মবিশ্বাস। আত্মবিশ্বাসহীন কোন নেতা জনগণের কল্যাণ বয়ে আনতে পারে । তাই নেতাকে অবশ্যই কাজে-কর্মে আত্মবিশ্বাসী হতে হবে।
১৬। মিষ্টভাষী : একজন ভালো নেতাকে রুঢ় আচরণ পরিত্যাগ করতে হবে। তাকে হতে হবে মিষ্টভাষী, সদালাপী, নিরহংকারী, সদাহাস্যোজ্জ্বল এবং কঠোর পরিশ্রমী।
পরিশেষে বলা যায়, একটি ভালো রাষ্ট্রের জন্য একজন ভালো নেতা অত্যন্ত জরুরি। সঠিক নেতৃত্ব থাকলে পিছিয়ে পড়া যে কোন দেশ ও জনগোষ্ঠী উন্নয়নের ধারায় অবতীর্ণ হতে পারে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions