পুঁজিবাদ কি / পুঁজিবাদ কাকে বলে
এ পুঁজিবাদ এক বিশেষ ধরনের অর্থ ব্যবস্থা যেখানে ব্যক্তি মালিকানা দ্বারা অর্থনীতি নিয়ন্ত্রিত হয়। এ ব্যবস্থায় ব্যক্তি সম্পত্তির পূর্ণ স্বীকৃতি রয়েছে। পুঁজিবাদে নতুন নতুন বিনিয়োগ বেসরকারি উদ্যোগে গৃহীত হয় এবং তা অবাধ প্রতিযোগিতা ও সর্বাধিক মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। পুঁজিবাদে চাহিদা-যোগান এবং উৎপাদনের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দ্রব্যের দাম নির্ধারিত হয়। এ ব্যবস্থায় উৎপাদন, বন্টন, ভোগ প্রভৃতি নিয়ন্ত্রনের জন্য কোন কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ থাকে। সুতরাং বলা যায়, যে অর্থ ব্যবস্থায় উৎপাদনের উপাদানসমূহ ব্যক্তিমালিকানাধীন থাকে তাকে পুঁজিবাদ বা ধনতন্ত্র বলে।
পুঁজিবাদের বৈশিষ্ট্য
পুঁজিবাদের ধারণা বিশ্লেষণ করলে এর কতগুলো বেশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হল:
১। মালিকানা: উৎপাদনের উপাদানসমূহ ব্যক্তি মালিকানাধীন থাকে। এ ব্যবস্থায় ব্যক্তি স্বাধীনভাবে ভূমি ক্রয়, শ্রমিক নিয়োগ ও পুঁজি গঠন করতে পারে। অর্থাৎ উৎপাদনে ব্যক্তি নিজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।
২। অবাধ প্রতিযোগিতা: পুঁজিবাদে বহু সংখ্যক উৎপাদক থাকে। তাদের মধ্যে অবাধ প্রতিযোগিতা থাকে। এজন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দ্রব্যসমূহ অধিক যত্নের সাথে উৎপাদন করা হয়। এর ফলে উৎপাদিত দ্রব্যসমূহের মান ক্রমাগত উন্নত হয়।
৩। ভোগের স্বাধীনতা: পুঁজিবাদে কোন দ্রব্য কি পরিমাণ ভোগ বা ক্রয় করবে সে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যক্তি পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করে। এ ব্যবস্থায় ভোগ বা ক্রয়ের উপরে রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
৪। সর্বাধিক মুনাফা অর্জন: পুঁজিবাদের প্রধান লক্ষ্য সর্বাধিক মুনাফা অর্জন। এ ব্যবস্থায় পুঁজিপতিরা সর্বাধিক মুনাফা অর্জনের জন্য যে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। অন্যভাবে বলা যায়, এ ব্যবস্থায় যেসব দ্রব্য সামগ্রী উৎপাদন অধিক লাভজনক, উৎপাদনকারীরা সেসব দ্রব্যসমূহ বেশি-বেশি উৎপাদন করে।
৫। শ্রেণি বৈষম্য: পুঁজিবাদে সর্বাধিক মুনাফা অর্জনের জন্য পুঁজিপতিরা অল্প ব্যয়ে উৎপাদন করতে চায়। তাই তাঁরা শ্রমিকদের অল্প পারিশ্রমিক প্রদান করে। এর ফলে মালিক শ্রেণি দিন-দিন ধনিক শ্রেণিতে পরিণত হয়। আর শ্রমিক শ্রেণি কালক্রমে গরীব হতে থাকে। এর ফলে সমাজে শ্রেণি বৈষম্য সৃষ্টি হয়।
৬। দক্ষতা বৃদ্ধি: পুঁজিবাদের অবাধ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য প্রত্যেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নিজ-নিজ দক্ষতা বৃদ্ধির চেষ্টা করে। এর ফলে এ ব্যবস্থায় মানব সম্পদের ক্রমশ উন্নয়নের সম্ভাবনা থাকে।
৭। অপচয় বৃদ্ধি: পুঁজিবাদে অবাধ প্রতিযোগিতা ও যেকোন উপায়ে ভোক্তাকে আকর্ষনের জন্য বিজ্ঞাপন প্রচার ও বিক্রয় কর্মী নিয়োগ করতে হয়। এতে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়।
পুঁজিবাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য অসাম্য সৃষ্টি। এই অসাম্য থেকে তৈরি হয় সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা। উন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলো কল্যাণমূলক ব্যবস্থা প্রচলনের মাধ্যমে অস্থিতিশীলতা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।
পরিশেষে বলা যায়, যে অর্থ ব্যবস্থায় উৎপাদনের উপাদানসমূহ ব্যক্তি মালিকানাধীন থাকে তাকে পুঁজিবাদ বলে। পুঁজিবাদের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলঃ (১) ব্যক্তি মালিকানাধীন উৎপাদনের উপাদান (২) অবাধ প্রতিযোগিতা (৩) ভোগের স্বাধীনতা (৪) সর্বাধিক মুনাফা অর্জন (৫) শ্রেণি বৈষম্য (৬) দক্ষতা বৃদ্ধি (৭) অপচয়।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions