সমাজতন্ত্র কি
সমাজতন্ত্রের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে রাষ্ট্রীয় মালিকানা। ব্যক্তি মালিকানা ভিত্তিক পুঁজিবাদের বিপরীতে সমাজতন্ত্রে সম্পদের রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠা হয়। মার্কসবাদী ব্যাখ্যাতে সমাজতন্ত্র হচ্ছে একটি অন্তর্বর্তীকালীন পর্যায়। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ধণিক শ্রেণির আধিপত্য ধ্বংস হয়। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য থাকে একটি শ্রেণিহীন, শোষণহীন সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা।
সমাজতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য
সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বরূপ ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে এর কতগুলো বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। নিম্নে সমাজতন্ত্রের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা করা হল:
১. রাষ্ট্রের কল্যাণে প্রাধান্য: সমাজতন্ত্রে বলা হয়, রাষ্ট্র গঠিত হয় সকল ব্যক্তির সমন্বয়ে। সুতরাং রাষ্ট্রের কল্যাণ ও মঙ্গল করার অর্থ হল ব্যক্তির কল্যাণ সাধন। এজন্য সমাজতন্ত্রে রাষ্ট্রের কল্যাণ সাধনে বেশি গুরুত্ব প্রদান করা হয়।
২. উৎপাদন ও বন্টন ব্যবস্থা: সমাজতন্ত্রে উৎপাদনের উপাদানসমূহ, যেমন ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠন এবং উৎপাদিত সম্পদের বন্টন ব্যবস্থা রাষ্ট্রীয় মালিকাধীন থাকে। এ ব্যবস্থায় প্রত্যেকে তার সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করে। এর ফলে প্রত্যেক মানুষের দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং রাষ্ট্রের দ্রুত উন্নয়ন সম্ভব হয়।
৩. ব্যক্তিগত সম্পত্তির অনুপস্থিতি: সমাজতন্ত্রে সকল সম্পত্তির উপর রাষ্ট্রীয় মালিকানা বিদ্যমান থাকে। ব্যক্তিগত সম্পত্তির মালিকানা না থাকায়, ব্যক্তি তার আয়ের মাধ্যমে কোন সম্পদের মালিক হতে পারে না। সমাজতন্ত্র সকল সম্পদ জাতীয়করণে বিশ্বাসী।
৪. পরিকল্পনা গ্রহণ: অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমতা অর্জনের লক্ষ্যে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন হয়। এজন্য সমাজতন্ত্রে সাধারণত কোন প্রকার বৈষম্য দেখা যায় না।
৫. নৈতিক উন্নতি: সমাজতন্ত্রে মানুষের মধ্যে নৈতিক উন্নতি ঘটে। সমাজতন্ত্রে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কোন ব্যক্তি পুঁজি গঠন করতে পারে না। তাই সমাজতন্ত্রে ব্যক্তিগত মুনাফা অর্জনের জন্য মূল্যবৃদ্ধি, কালোবাজারী ও দুর্নীতির সম্ভাবনা সাধারণত থাকে না। এর ফলশ্রুতিতে মানুষের নৈতিক উন্নতির সম্ভাবনা থাকে।
৬. সর্বাধিক কল্যাণ: সমাজতন্ত্রে সর্বাধিক মুনাফা অর্জন নয়, বরং জনগণের সর্বাধিক কল্যাণ সাধন ও মৌলিক চাহিদা পূরণ করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ড পরিচালিত হয়।
৭. ব্যক্তিস্বাধীনতার অভাব: সমাজতন্ত্রে সকল বিষয় রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে থাকে বিধায় ব্যক্তিস্বাধীনতার অভাব দেখা যায়।
৮. বিবিধ: (ক) সমাজতন্ত্রে অবাধ প্রতিযোগিতার পরিবর্তে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতার উপর অধিক গুরুত্ব
আরোপ করা হয়। এর ফলে জনগণ নিজেদেরকে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত করার সুযোগ পায়। আবার, কখনো-কখনো সমাজতন্ত্র ব্যক্তিস্বাধীনতার অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। কারণ এ ব্যবস্থায় ব্যক্তির চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা প্রভৃতি রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে থাকে। এরূপ নিয়ন্ত্রণ অনেক সময় ব্যক্তিস্বাধীনতা বিনষ্ট করে।
(খ) আমলাতন্ত্রের প্রভাব: সমাজতন্ত্রে সবকিছু রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয় বিধায় আমলাদের প্রভাব অধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমন অবস্থা সৃষ্টি হলে সমাজতন্ত্র হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ে।
সামন্ততান্ত্রিক কিংবা পুঁজিবাদী ব্যবস্থাতে লাঞ্চিত-বঞ্চিত নিম্নশ্রেণির মানুষ সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মানুষের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়।
পরিশেষে বলা যায়, যে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় উৎপাদনের উপাদানসমূহ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন থাকে তাকে সমাজতন্ত্র বলে। সমাজতন্ত্রের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে (১) রাষ্ট্রের কল্যাণকে প্রাধান্য দেয়া হয় (২) রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উৎপাদন ও বন্টন (৩) ব্যক্তিগত সম্পত্তির অনুপস্থিতি (৪) রাষ্ট্র গৃহীত উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা (৫) সাধারণ জনগনের সর্বাধিক কল্যাণ (৬) ব্যক্তিস্বাধীনতার অভাব।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions