সরকার কি
যে চারটি উপাদান নিয়ে রাষ্ট্র গঠিত হয় তার মধ্যে অন্যতম একটি উপাদান হল সরকার। সরকার ব্যতীত রাষ্ট্র পরিচালনা করা অসম্ভব। রাষ্ট্রের কর্মকান্ড সরকারের মাধ্যমেই প্রকাশিত হয়। সরকার হল একটি বাস্তব রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। একে রাষ্ট্রের মুখপাত্রও বলা হয়। বৃহৎ অর্থে সরকার গঠিত হয় সকল নাগরিকের সম্মতিক্রমে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচকমন্ডলী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে সরকার গঠন বা পরিবর্তন করে থাকে।
অধ্যাপক জে ডব্লিউ গার্নার বলেন, “সরকার হচ্ছে একটি কার্যনির্বাহী মাধ্যম বা যন্ত্র যার মাধ্যমে সরকারের সাধারণ নীতিমালা নির্ধারিত হয় এবং যার দ্বারা সাধারণ বিষয়াদি নিয়ন্ত্রিত হয় ও সাধারণ স্বার্থ রক্ষিত হয়।”
অধ্যাপক আর জি গেটেল বলেন, “সরকার হচ্ছে রাষ্ট্রের একটি যন্ত্র বা সংস্থা।” পরিশেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্রের আইন-কানুন, রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত, বিধি-নিষেধ, ইচ্ছা-অনিচ্ছা যে সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকাশিত ও বাস্তবায়িত হয় তাকে সরকার বলে। সরকারবিহীন রাষ্ট্র তার কর্মকান্ড পরিচালনা করতে সক্ষম হয় না।
সরকারের শ্রেণিবিভাগ
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় সরকারের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কিত বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বহুকাল ধরে সরকারের শ্রেণিভাগের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচিত হয়ে আসছে। অধ্যাপক অ্যালান বল (Alan Ball) তাঁর "Modern Politics and Government” গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার সূচনা লগ্ন থেকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিবিভাগের একটি প্রচেষ্টা সবসময় লক্ষ্য করা যায়। বস্তুত শ্রেণিবিভাগের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সরকারি কাঠামো ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের পন্থা-পদ্ধতির মধ্যে সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য বিচার-বিশ্লেষণ করা যায় এবং এর ফলে সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহের সমালোচনামূলক মূল্যায়ন করা যায়।
সনাতনী ধারণা সরকারের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে প্রাচীন ও আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে ব্যাপক মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। প্রাচীনকাল থেকে। সরকারের শ্রেণিবিভাগ মূলত তিনটি। প্রাচীনকালে যারা সরকারকে বিভিন্ন ভাগে বিশ্লেষণ করেছেন তাঁদের মধ্যে হিরোডোটাস (Herodotus) এবং এরিস্টটল (Aristotle) উল্লেখযোগ্য। হিরোডোটাস রাজতন্ত্র, কতিপয়তন্ত্র ও গণতন্ত্র এ তিন শ্রেণিতে সরকারকে বিভক্ত করেছেন। তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এরিস্টটল সরকারকে যে শ্রেণিতে বিভক্ত করেছিলেন সেটি বেশি প্রচলিত এবং সাড়া জাগানো।
এরিস্টটল এর সরকারের শ্রেণিবিভাগ
সরকারের শ্রেণি-বিভাজনকে কেন্দ্র করে প্রাচীন এবং আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। প্রাচীন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটলের নাম এ ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে উল্লেখযোগ্য। পন্ডিত এরিস্টটল তাঁর প্রখ্যাত ‘পলিটিক্স' নামক গ্রন্থে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে সরকারের শ্রেণিবিভাগ করেছেন। কথিত আছে যে, তিনি সমকালীন ১৫৮টি নগর রাষ্ট্রের সংবিধান পর্যালোচনা করে এ শ্রেণিবিভাগ করেছেন। এরিস্টটল দু'টি মূল সূত্র বা নীতির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের শ্রেণিবিভাগ করেছেন। সরকার ও শাসনব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে তিনি এ দুটি মূল সূত্র উপস্থাপন করেন— (ক) উদ্দেশ্য নীতি (Principle of Purpose) (খ) সংখ্যা নীতি (Principle of Number)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions