সম্পত্তি কাকে বলে
সাধারণ অর্থে সম্পত্তি হচ্ছে কোনো বস্তু বা সম্পদের উপর ব্যক্তির সমাজস্বীকৃত চূড়ান্ত অধিকার বা মালিকানা। অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও উপযোগ সম্বলিত মালিকানাধীন কোনো বস্তুকে সম্পত্তি বলা যেতে পারে। অধিকার (Right) ছাড়া সম্পত্তির অস্তিত্ব উপলব্ধি করা যায় না। সম্পদ এবং সম্পত্তির পার্থক্য গড়ে উঠে অধিকার বা মালিকানার ভিত্তিতে। প্রাকৃতিক সম্পদে সবার অধিকার থাকে, কিন্তু সামষ্টিক অধিকারে এর মূল্য প্রকাশ পায় না। যখন সুনির্দিষ্ট অধিকার বা মালিকানা আরোপিত হয় তখনই তার মূল্য বেড়ে যায়। সাধারণত মানুষ সম্পদের উপর সময়, শ্রম, মূলধন, প্রযুক্তি সর্বোপরি অধিকার আরোপের মধ্য দিয়ে মালিকানা অর্জন করে এবং সম্পত্তি হিসেবে তখন এর গুরুত্ব আরও অনেক বেড়ে যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা কোনো চর হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদ। এ চর যদি বাংলাদেশের অধিকার বা মালিকানায় অন্তর্ভুক্ত হয় তখন এটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। কারণ মালিকানার কারণে এটি বাংলাদেশের সম্পত্তি বলে পরিগণিত। ভারত-মায়ানমার ইচ্ছা করলেও এটি তাদের অধিকারে নিতে পারে না।
সম্পত্তির সংজ্ঞা (Definition of property)
বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী ও অর্থনীতিবিদ বিভিন্নভাবে সম্পত্তির সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। যেমন: K. Davis তার 'Human Society' (1948: 452) গ্রন্থে বলেছেন, “সম্পত্তি সীমাবদ্ধ কোনো কিছুতে মানুষের অধিকার এবং আইনগত বৈধতা ব্যতীত আর কিছুই নয়।” (Property is nothing more than rights and obligations with respect to something scarce.) সম্পত্তির সংজ্ঞায়, 'International Encyclopedia of social sciences' (Vol. 12. P. 590)'-এ বলা হয়েছে, “সম্পত্তি এমন একটি প্রত্যয়ের নাম, যা সীমাবদ্ধ কোনো সামাজিক মূল্যের প্রতি মানুষের অধিকার, আইনগত বৈধতা, ভোগের নিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তা যা ঐ সমাজের মানুষের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে।” (Property is the name for a concept that refers to the rights and obligations and the privileges and restrictions thats govern the behaviour of man in society towards the scarce object of value in that society.)
সম্পত্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা দিয়েছেন L. T. Hobhouse তাঁর 'The Historical Evolution of Property' গ্রন্থে। তাঁর মতে, “সম্পত্তি এমন একটি প্রত্যয়কে ধারণ করে যা বস্তুর উপর ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণ। এ নিয়ন্ত্রণ সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত এবং সম্পত্তি কম-বেশি স্থায়ী ও একচেটিয়া।” (Property is to be conceived in terms of the control of man over things, a control which is recognized by society, more or less permanent and exclusive.) অতএব, সম্পত্তি হচ্ছে এমন সম্পদ যার উপর ব্যক্তি বা সমাজের নিরঙ্কুশ এবং স্থায়ী মালিকানা ও অধিকার রয়েছে। এ অধিকার বা মালিকানা সমাজ ও রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত এবং সংরক্ষিত। সম্পত্তির যোগান সীমাবদ্ধ এবং তা হস্তান্তরযোগ্য।
সম্পত্তির বৈশিষ্ট্য (Characteristic of property)
উপযুক্ত সংজ্ঞা ও আলোচনার ভিত্তিতে প্রতীয়মান হয় যে, সম্পত্তির ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত, সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় মালিকানা এবং
অধিকার অপরিহার্য। এটি সম্পত্তির প্রধান বৈশিষ্ট্যও বটে। যেসব বৈশিষ্ট্যের আলোকে সম্পত্তিকে সহজে সনাক্ত করা যায়, সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হল:
১। দখলিস্বত্ব (Occupation): সম্পত্তির দখলিস্বত্ব বলতে মূলত কারও অধিকারে থাকা এবং ভোগ করাকে বুঝায়। যে। সম্পদের উপর কারও দখল আরোপিত নয়, তা সম্পত্তির আওতাভুক্ত হতে পারে না।
২। চুক্তি (Contract): সম্পত্তি অর্থনীতির কোনো স্থবির সত্তা নয়। এটি বিনিময়, হস্তান্তরিত ও বিবর্তিত হতে পারে। আর । চুক্তি এ ক্ষেত্রে একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচিত। আদি হতে আজ পর্যন্ত সম্পত্তির যে বিবর্তন হয়েছে এবং বিকাশ। হয়েছে, তার মূলে রয়েছে চুক্তি।
৩। সম্পত্তির অধিকার (Property right): সম্পত্তির ভিত্তি দান করেছে এর উপর মানুষের অধিকার। সম্পত্তির উপযোগিতা। আছে। মানুষের অভাব ও প্রয়োজন মেটানোর ক্ষমতা আছে। তাই এর উপর মানুষের অধিকার অনিবার্য হয়ে দেখা দেয়। যেমন: পুঁজি, প্রযুক্তি, সময়-শ্রম বিনিয়োগ করে ভূগর্ভস্থ পানি (প্রাকৃতিক সম্পদ) উত্তোলন করার পর তার মানুষের অধিকার। আরোপিত হয়। এ অধিকার ও মালিকানার ভিত্তিতে ওই পানির বাণিজ্যিক ব্যবহার হয়ে থাকে।
৪। মুদ্রা (Money): আদিম সম্পত্তিতে মুদ্রা ছিল না। চুক্তি ও বিনিময়ের মাধ্যমে অর্থনৈতিক লেনদেন সম্পন্ন হত। কিন্তু। আধুনিক অর্থনীতি তথা সম্পত্তির মূল নিয়ামক হচ্ছে মুদ্রা। মুদ্রা ব্যবস্থাই আধুনিক সম্পত্তির মূল শক্তি। সমাজবিজ্ঞানীয় K. Davis সম্পত্তির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করেছেন। যেমন:
ক) হস্তান্তরযোগ্যতা (Transferability): উত্তরাধিকার, বিক্রয়, দান প্রভৃতি প্রয়োজনে সম্পত্তির হস্তান্তরযোগ্যতা অনিবার্য। একটি বিষয়। তাই হস্তান্তরযোগ্যতা ছাড়া কোনো কিছুকে সম্পত্তি বলে গণ্য করা যায় না।
খ) শক্তি সত্তা (Power aspects): সম্পত্তির মধ্যে একটি শক্তি বা ক্ষমতা লুকিয়ে থাকে। এ শক্তি বলেই বস্তু সম্পত্তিতে। পরিণত হয় এবং মানুষের প্রয়োজন মেটাতে পারে।
গ) সম্পত্তি হচ্ছে কোনো বস্তুগত উপাদান (Concrete external object): ডেভিসের মতে, সম্পত্তি বলতে কোনো না। কোনো বস্তুকেই নির্দেশ করে। অবস্তুগত কোনো উপাদান সম্পত্তি নয়। এগুলো ছাড়াও সম্পত্তির ক্ষেত্রে অধিকার বা । মালিকানার সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, স্থায়িত্ব, সীমাবদ্ধতা, উপযোগিতা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য অনস্বীকার্য।
উল্লেখ্য যে, সম্পত্তি যেমন বস্তুগত হতে পারে, তেমনি অবস্তুগতও হতে পারে। যেমন: মানুষের সুনাম, সততা, মেধা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, সৃজনশীলতা ইত্যাদি অবস্তুত সম্পত্তি।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions