ব্যাংক কি?
যে প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরণের আর্থিক সেবা প্রদান করে, যেমন অর্থ জমা রাখা বা ধার দেয়া, তাকে ব্যাংক বলে।
আধুনিক অর্থনীতিতে ব্যাংক একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠান। সংক্ষেপে বলতে গেলে, ব্যাংক হল এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা একদিকে জনসাধারণের উদ্বৃত্ত অর্থ জমা রাখে এবং অন্যদিকে বিভিন্ন জনসাধারণ ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে তাদের প্রয়োজনমত ঋণ প্রদান করে। জনসাধারণ তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ নিরাপদে রাখার জন্য ব্যাংকে জমা রাখে। ব্যাংক এই গচ্ছিত অর্থ পুণরায় জনসাধারণকে ধার দেয়। এভাবে ব্যাংক এক শ্রেণীর লোকের কাছ থেকে আমানত হিসেবে অর্থ জমা রাখে এবং অন্য এক শ্রেণীর লোককে ঋণ প্রদান করে।
ব্যাংকের উৎপত্তি
ঠিক কোন সময় হতে ব্যাংক-এর উৎপত্তি হয়েছে এ ব্যাপারে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে তবে ধারণা করা হয়, ইতালীয় শব্দ 'Banco' হতে ব্যাংক শব্দের উৎপত্তি। ইতালীতে 'Banco' শব্দের অর্থ লম্বা টুল। সেখানে লোম্বাডি নামক স্থানে ইহুদী মহাজনেরা লম্বা টুল বা বেঞ্চের উপর বসে টাকা-পয়সা লেনদেন করত।
মানব সভ্যতার সূচনায় মানুষের অভাবের সংখ্যা ও পরিমাণ খুব কম ছিল। তাই মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় সব জিনিস নিজেরাই তৈরি করত। ক্রমে লোকসংখ্যা যতই বাড়তে থাকে মানুষ ততই নিজস্ব প্রয়োজনে পরস্পরের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ফলে দ্রব্য বিনিময় প্রথার সৃষ্টি হয়। এ প্রথার অসুবিধা দূর করার উদ্দেশ্যে অর্থের আবিষ্কার ও ব্যবহার হয়। মানুষ তাদের উদ্বৃত্ত সম্পদ বিক্রি করে অর্থ জমা করতে লাগল। কিন্তু এক্ষেত্রেও বিপত্তি – মানুষ ভুগতে লাগল নিরাপত্তাহীনতায়। উদ্বৃত্ত অর্থ নিজের কাছে রাখা নিরাপদ ছিল না বলে মানুষ সৎ, বিশ্বস্ত ও অবস্থাশালী আমানতদারের শরণাপন্ন হয়। এক্ষেত্রে এগিয়ে আসে স্বর্ণকাররা। তারা ব্যাংক হিসেবে কাজ করত এবং অর্থ, সোনা, রূপা, অলংকারাদি ইত্যাদি আমানত হিসেবে জমা রাখত। এভাবে ব্যাংকের প্রথম কাজ হিসেবে আমানত গ্রহণের সূত্রপাত হয়।
স্বর্ণকারগণ তাদের অভিজ্ঞতা হতে বুঝল যে, আমানতকারীগণ তাদের গচ্ছিত অর্থ একই সময় উত্তোলন করে না। তাই স্বর্ণকারেরা গচ্ছিত অর্থের একটা অংশ অন্যদেরকে সুদে ধার দিত। দেখা গেল যে, সুদের ব্যবসা হতে প্রচুর মুনাফা আসতে লাগল। ফলে আমানত বৃদ্ধি করার জন্য স্বর্ণকারেরা আমানতকারীদের কিছু সুদ দেওয়া আরম্ভ করল। স্বর্ণকারেরা আমানতকারীদেরকে যে হারে সুদ দিত তা অপেক্ষা বেশি সুদের হারে অন্যদেরকে ঋণ দিত। এভাবে সুদ দেয়া-নেয়ার মধ্যেই নিহিত ছিল স্বর্ণকারদের মুনাফা এবং এ মুনাফা অর্জন পদ্ধতি ব্যাংকের এক গুরুত্বপূর্ণ কাজের সূত্রপাত ঘটায়।
ক্রমান্বয়ে আমানত এবং ঋণ ও মুনাফার পরিমাণ বহুগুণ বেড়ে যাওয়ার ফলে প্রাতিষ্ঠানিক এবং স্বতন্ত্র ব্যবস্থা হিসেবে ব্যাংক ব্যবসার আত্মকাশ ঘটে।
ব্যাংক-এর প্রকারভেদ প্রগতিশীল সমাজে অর্থনৈতিক কাজকর্ম বিভিন্ন দিকে প্রসারিত হওয়ায় বিভিন্ন ক্ষেত্রের উন্নয়নের তাগিদে বিভিন্ন প্রকার ব্যাংক প্রতিষ্ঠানের সূত্রপাত ঘটে। অতীতে একই ব্যাংক মুদ্রা তৈরী, বিভিন্ন শ্রেণীর লোকের আমানত গ্রহণ এবং কৃষি, শিল্প ও ব্যবসায় বাণিজ্য ক্ষেত্রে ঋণ প্রদান ইত্যাদি কাজ করত। কিন্তু একই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এ সকল কাজ সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভবপর নয়। এজন্য কাজের শ্রেণীভেদে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক। বর্তমানে অর্থনীতির প্রতিটি শাখার জন্য পৃথক পৃথক ব্যাংক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
কার্যক্রমের ভিন্নতাভেদে প্রাথমিক দৃষ্টিতে ব্যাংক যে রকম হতে পারে, তা হল –
১. কেন্দ্রীয় ব্যাংক
২. বাণিজ্যিক ব্যাংক
৩. শিল্প ব্যাংক
৪. কৃষি ব্যাংক
৫. সমবায় ব্যাংক
৬. বিনিময় ব্যাংক
৭. সঞ্চয় ব্যাংক
৮. বন্ধকী ব্যাংক
৯. ইসলামী ব্যাংক
১০. বিশ্ব ব্যাংক
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions