রেনেসাঁ অর্থ কি
রেনাইসান্স (Renaissance) শব্দটির অভিধানিক অর্থ হলো পুনর্জন্ম, নবজাগরণ বা পুনরুজ্জীবন।
মানব সভ্যতার ইতিহাস অতীত থেকে বর্তমান এবং বর্তমান থেকে আগামীর পথে এগিয়ে চলেছে। সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি আর অর্থনীতি ইতিহাসের কালের পরিসীমায় আবদ্ধ। ইতিহাসে কোনো ঘটনারই পুনরাবৃত্তি একই ভাবে কিম্বা একই পন্থায় কিম্বা ধারায় ঘটে না। রেনেসাঁস মূলত একটি দীর্ঘস্থায়ী সমাজ পরিবর্তন প্রক্রিয়া। এই রেনেসাঁসের ভেতর দিয়ে আধুনিক পাশ্চাত্য সভ্যতার উত্থান ঘটেছে, একই সঙ্গে অবসান ঘটে মধ্যযুগের। সে কারণেই রেনেসাঁসকে এক কথায় সংজ্ঞায়িত করা যায় না; এর ভিতরগত এবং বাহ্যিক মর্ম অত্যন্ত ব্যাপক। প্রচলিত অর্থে রেনেসাঁসের বলতে বুঝায় প্রাচীন যুগের গ্রেকো- রোমান সংস্কৃতির পুনরুত্থান তথা প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান, শিল্পকলা, ভাস্কর্যকলা প্রভৃতি অধ্যয়ন করে সত্য সুন্দরকে গ্রহণ করা, এর ভিত্তিতে জীবনকে পরিচালনা করা। তবে সংজ্ঞাটির প্রধান সীমাবদ্ধতা হলো শুধুমাত্র প্রাচীন জ্ঞান বিজ্ঞান অধ্যয়ন এবং প্রয়োগ মানুষের দৃষ্টিভিঙ্গ গঠনে সহায়ক হলেও সামগ্রিক সমাজ বদলের প্রধান কারণ হতে পারে না।
রেনেসাঁসের প্রচলিত সংজ্ঞার প্রায় বিপরীতে আধুনিক সংজ্ঞাটি প্রতিস্থাপিত হয়েছে। আধুনিক ইতিহাসবিদ ও সমাজ বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে মধ্যযুগের সামমত্ম আর্থ-সামাজিক কাঠামোর স্থবিরতার অবসান ঘটিয়ে নতুন উৎপাদন ব্যবস্থা, নতুন উৎপাদন সম্পর্ক এবং আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার উন্মেষ ও বিকাশের মধ্য দিয়ে ইউরোপের সমাজ জীবনে যে ব্যাপক পরিবর্তনের সূচনা ঘটে-এটাই রেনেসাঁস বা নবজাগরণ। উক্ত নব জীবনের আলোকে ইউরোপের মানুষ তাদের অতীত ঐতিহ্য তথা গ্রিক ও রোমান যুগের সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান, শিল্পকলা প্রভৃতি পাঠে মনোনিবেশ করার মাধ্যমে জীবন ও জগতকে যুগের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ হবে। আর এভাবেই শুরম্ন হয় ইউরোপের ইতিহাসে এক নতুন পর্ব। পর্বটির উত্তরণ ঘটেছিল সমাজ, সংস্কৃতি, শিক্ষা-সাহিত্য, অর্থনীতি, রাজনীতিসহ রাষ্ট্রব্যবস্থার সর্বক্ষেত্রে। পঞ্চদশ শতকের ইউরোপের রেনেসাঁসকে প্রকৃত অর্থেই ইউরোপের ইতিহাসে রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার এক অবস্থান থেকে গুণগতভাবে অন্য এক উত্তরণশীল পর্ব হিসেবে অভিহিত করা যায়।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions