প্রাকৃতিক ভূগোল কাকে বলে
বিজ্ঞানের যে শাখা অধ্যয়নে ভূ-ত্বকের উপরিভাগের পরিবেশ এবং কার্যরত বিভিন্ন ভূ-প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াসমূহ সম্পর্কে জানা যায় তাকে প্রাকৃতিক ভূগোল বলে। এটি বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক শাখা সমূহ নিয়ে গড়ে উঠেছে। যেমন: আবহাওয়াবিদ্যা, জলবিদ্যা, সমুদ্রতত্ব, ভূমিরূপবিদ্যা, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান ইত্যাদি।
প্রাকৃতিক ভূগোল চর্চার ক্ষেত্র
যে সব ভূগোলবিদ প্রাকৃতিক ভূগোল চর্চা করেন তাদের মূখ্য বিষয় হলো প্রাকৃতিক বিষয়াদি। যেমন: পৃথিবীর জন্ম, ভূ-প্রকৃতি, শিলা ও খনিজ, ভূমিরূপ, নদ-নদী, জলবায়ু, মৃত্তিকা ইত্যাদি।
প্রাকৃতিক ভূগোলের শ্রেণীবিভাগ
আধুনিক ভূগোলে নানা চর্চার মাধ্যমে সব ক্ষেত্রেই ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে। ফলে সব শাখায়ই বহু উপরিভাগ গড়ে উঠেছে। প্রাকৃতিক ভূগোলের প্রতিটি উপ-বিভাগ এর সমগোত্রীয় বিষয়ের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। প্রাকৃতিক ভূগোল পাঠের সুবিধার জন্য ভূগোলবিদগণ একে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছেন।
১। ভূমিরূপ বিদ্য,
২। জলবায়ুবিদ্যা
৩। সমূদ্রবিদ্যা
৪। মৃত্তিকাবিদ্যা
৫। উদ্ভিদবিদ্যা।
নিম্নে এগুলোর বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হলো:
ভূমিরূপবিদ্যা (Geo-morphology):
ভূগোলের এই শাখা পৃথিবীর অভ্যন্তরীন অবস্থা, পৃথিবীর উৎপত্তি, ভূ-তাত্ত্বিক সময় মাপনী, ভূ-আলোড়ন, ভূ-আন্দোলন বিভিন্ন প্রকার ভূমিরূপ, প্রভৃতি বিষয় নিয়ে কাজ করে।এই শাখার অধ্যয়নে পৃথিবীর অভ্যন্তরীন অবস্থার বর্ণনা ও এই অবস্থার প্রেক্ষিতে ভূ-ত্বকের পরিবর্তন, পৃথিবীর উৎপত্তি সংক্রান্ত নানা প্রকার মতবাদ ও এর উপর পরীক্ষা নিরীক্ষা, প্রাথমিকভাবে পৃথিবীর আকার ও আয়তন কেমন ছিল তার বর্ণনা, ভূমিকম্প ও আলোড়নের ফলে পৃথিবীতে যে নানা প্রকার ভূমিরূপ সৃষ্টি হয় সে সম্পর্কে নানারূপ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও জ্ঞান লাভ সম্ভব হয়।
জলবায়ুবিদ্যা (Climatology):
এই শাখা বায়ু, বায়ুস্তর, বায়ুর উপাদান, বায়ুর ধর্ম, বায়ুর তাপমাত্রা, বায়ুচাপ, বায়ুপ্রবাহ, বায়ুপুঞ্জ, বায়ুপ্রাচীর, ঘুর্ণিবাত, প্রতিপ ঘুর্ণিবাত, বায়ুমন্ডলের জলীয়বাষ্প, বৃষ্টিপাত, পৃথিবীর জলবায়ু অঞ্চল প্রভৃতি নিয়ে কাজ করে। এ ক্ষেত্রে উপরোক্ত বিষয়সমূহের বিশ্লেষণমূলক সমীক্ষা, পরিমাপ, তথ্য, তত্ত্ব ও পূর্বাভাস পর্যন্ত দেয়া সম্ভব। পৃথিবীর অঞ্চলভেদে আবহাওয়ার রূপ, বিস্তরণ, নানা প্রাকৃতিক কারণে এসব আবহাওয়ার পরিবর্তন, কোন স্থানের আবহাওয়ার বিন্যাস, আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রভৃতি বিষয় আবহাওয়াবিদ্যার অন্তর্গত। ভূগোলের আওতাভূক্ত পদ্ধতি দুর অনুধাবনের মাধ্যমে আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও বিন্যাস প্রত্যক্ষ রূপে জানা সম্ভব।
সমুদ্র তত্ত্ব বা সমুদ্র বিদ্যা (Oceanography)
প্রাকৃতিক ভূগোলের এই ভাগটি সাগর, মহাসাগর, উপসাগর ইত্যাদির উৎপত্তি, বিন্যাস, বিস্তরণ, সমুদ্রস্রোত, সমুদ্র তরঙ্গ ও এর কার্য, সমুদ্রতলের বিন্যাস, সমুদ্রে বসবাসকারী প্রাণী ও উদ্ভিদের বিন্যাস, সমুদ্র তলের ভূ-প্রকৃতি, স্থলভাগের উপর সমুদ্রের প্রভাব, জোয়ার-ভাঁটা প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা করে। এই ধারণাকে কাজে লাগিয়ে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার ও সে অনুযায়ী পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পদক্ষেপ গ্রহণ সম্ভব হয়।
মৃত্তিকাবিদ্যা (Soil Science)
পৃথিবীর বহিঃরাবরণ ভূ-ত্বকের গঠন উপাদান মৃত্তিকা ভূগোলের এই শাখার আওতায় পড়ে। মৃত্তিকার উপৎপত্তি, গঠন, ভূ-তাত্ত্বিক সময়মাপনী অনুযায়ী মৃত্তিকার গঠন ও বিন্যাস, অঞ্চল ও সময়ভেদে মৃত্তিকার বিস্তরণ, মৃত্তিকার উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠা প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের বিন্যাস, মৃত্তিকার প্রকার সর্বোপরি মৃত্তিকা ও পরিবেশের আন্তঃসম্পর্ক ও এর প্রভাব নিয়ে ভূগোলের এ শাখাটি কাজ করে।
উদ্ভিদ বিদ্যা (Biotic Science)
ভূগোলের এই শাখায় অন্তর্ভূক্ত বিষয় সমূহ হচ্ছে উদ্ভিদের সময় ও স্থান ভেদে ক্রমবিকাশ, পরিবেশের উপর উদ্ভিদের প্রভাব বা পরিবেশভেদে উদ্ভিদের বিস্তরণ, স্থান ও সময়ভেদে উদ্ভিদের বিন্যাস, উদ্ভিদ বাস্তব্যবিদ্যা এবং উপরোক্ত বিষয়সমূহের আলোকে পৃথিবীর ভূ-আচ্ছাদন সম্পর্কে ধারণা ও সে অনুযায়ী কি পদক্ষেপ নিলে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions