বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা
বাংলাদেশের অর্থনীতি মিশ্র অর্থনীতি। অর্থনীতির সকল খাতে ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার প্রাধান্য স্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু বেসরকারী খাতকে তার যথাযোগ্য ভূমিকা পালনের সুযোগ সৃষ্টির জন্য সরকারী খাতের ভূমিকার গুরুতব অনস্বীকার্য। বর্তমান বাজার অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে বেসরকারী খাতের ভূমিকাই প্রধান। তবে কিছু ক্ষেত্রে সরকারী খাতের সীমিত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য গুলি নিচে উলে-খ করা হলঃ
ক) সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানার অধিকার স্বীকার করা হয়েছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে, যেমন কৃষি জমির ক্ষেত্রে, সম্পত্তির মালিকানার সর্বোচ্চ সীমা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে।
খ) ব্যক্তিগত উদ্যোগ, ব্যবসা- বানিজ্য ও পেশা নির্বাচনের স্বাধীনতা স্বীকৃত হয়েছে। কিন্তু শিল্প স্থাপন, ব্যবসা বানিজ্য পরিচালনা ইত্যাদি সরকারী নীতিমালা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন, বাজারে নির্দ্দিষ্ট গুণগত মানের দ্রব্য বিক্রয়, দূষণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত আইন। এ ছাড়া বেআইনী পেশা গ্রহণের উপর বিধিনিষেধ রয়েছে।
গ) বাজার ব্যবস্থার মাধ্যমে অধিকাংশ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তবে কোন কোন পণ্যের বাজার সরকারী হস্তক্ষেপ বা নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। যেমন, ধান কাটার মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহ, বেশি দামের সময় খোলা বাজারে ন্যায্যমূল্যে চাল বিক্রয়, ঘাটতির সময় চাল আমদানি ইত্যাদির মাধ্যমে সরকার চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে।
ঘ) বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাতসমূহ রাষ্ট্রায়ত্ত করা হয়। তবে ধীরে ধীরে বাজার অর্থনীতির প্রয়োজনে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের গুরুতব হ্রাস পায়। বর্তমানে ব্যক্তিগত উদ্যোগে সকল কাজ পরিচালিত হলেও শিল্পখাত, আর্থিক খাত, যোগাযোগ ও পরিবহন খাত, খনিজ ও জ্বালানী খাত ইত্যাদি ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত খাত রয়েছে। শিল্প আইনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ৬টি ক্ষেত্রে ছাড়া অন্যান্য সকল শিল্প ব্যক্তিগত খাতের বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
ঙ) অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যক্তিগত ও সরকারী উভয় খাত গুরুত্বপূর্ণ ও পরিপূরক ভূমিকা পালন করে। বিশেষত, দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে সরকার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
চ) যে সকল ব্যক্তি বাজারে অংশগ্রহণ করতে পারে না বা অংশগ্রহণের সুযোগ পায় না বাজার অর্থনীতিতে তাদের কল্যাণ হয় না। এসব বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করে তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করে। যেমন, দারিদ্র বিমোচনের উদ্দেশ্যে গৃহীত কাজের বিনিময়ে খাদ্য, ডি,জি,ডি কর্মসূচী ইত্যাদি।
ছ) অর্থনীতিতে কোন দুর্যোগ বা সঙ্কট দেখা দিলে সরকার তা মোকাবিলার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যেমন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ব্যাধি ইত্যাদির প্রকোপ লাঘবের জন্য সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। কোন বাজারে যোগানের স্বল্পতার জন্য বা ফটকাবাজির জন্য অস্থিতিশীলতা দেখা দিলে বাজারকে স্থিতিশীল করার জন্য সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions