ইসলামি অর্থনীতি কাকে বলে
ইসলামী অর্থনীতি: ইসলামী অর্থনীতি বলতে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী পরিচালিত একটি ন্যায়পরায়ণ সমাজে সম্পদের দক্ষ বরাদ্দ ব্যবস্থাকে বুঝায়।
ইসলামি অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য
এই অর্থনৈতিক ব্যবহার কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্য নিচে আলোচনা করা হল :
ক) সুদ হারাম : ইসলামী অর্থনীতিতে সুদকে হারাম করা হয়েছে। সুদ ঋণদানকারীর জন্য নিশ্চিত প্রতিদানের ব্যবস্থা করে; ঋণ গ্রহীতার ঝুঁকি বিবেচনা করে না। কোন ব্যাংক ঋণ দান করলে ঋণের অর্থ দ্বারা পরিচালিত বিনিয়োগ বা ব্যবসায় ব্যর্থ হলেও ব্যাংক নির্দ্দিষ্ট হারে সুদ পায়। অনুরূপভাবে কোন ব্যক্তি ব্যাংকে আমানত রাখলে আমানতের উপর নির্দিষ্ট হারে সুদ পায় যদিও আমানতের অর্থ ঋণ দিয়ে ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এভাবে ঋণের কোন ঝুঁকি না নিয়ে ব্যাংক বা ব্যক্তি ঋণের উপর সুদ অর্জন করে। কিন্তু ন্যায়পরায়ণতা দাবী করে যে ব্যবসায় লাভজনক হলে যেমন তারা মুনাফার অংশ পাবে, ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে তেমনি তারা ক্ষতির ভাগ বহন করবে। অর্থাৎ ঋণদানকারী মুনাফা ও ঝুঁকি উভয়েরই অংশ বহন করবে।
খ) ইসলামী পুর্নবন্টন : ইসলামী অর্থনীতির দ্বিতীয় প্রধান বৈশিষ্ট্য হল ইসলামী পুর্নবন্টন ব্যবস্থা। ইসলামী অর্থনীতিতে পুর্নবন্টনের উদ্দেশ্যে যে সকল হাতিয়ার ব্যবহৃত হয় তার মধ্যে রয়েছে যাকাত (নিসাব স্তরের অতিরিক্ত সম্পদের উপর শতকরা ২.৫ হারে আরোপিত কর), সদকা (স্বেচছামূলক দান), গনিমত (যুদ্ধে লুন্ঠিত মাল), খারাজ (যুদ্ধে বিজিত ভূমির উপর আরোপিত কর), উশর (শস্যের উপর যাকাত) ইত্যাদি। মনে করা হয় যে, যাকাত আয় পুর্নবন্টনের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র একজন মুসলমান রাষ্ট্র আরোপিত আয়কর ফাঁকি দিতে পারে। কিন্তু সে ইসলামী রাষ্ট্রে ধর্মীয় বিধান কর্তৃক নির্ধারিত যাকাত স্বেচছায় প্রদান করবে।
গ) ইসলামী অর্থনৈতিক নিয়ম : ইসলামী অর্থনীতিতে ব্যক্তি বা ফার্ম ইসলামী নিয়মের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ পরিচালনা করে। এ সকল নিয়ম ভাল কাজে উৎসাহ দান করে এবং মন্দ কাজ নিরুৎসাহিত করে। এসব নিয়ম অপচয়, অমিতব্যয় ও আড়ম্বর পরিহার করতে উৎসাহ দেয়। ক্ষতিকর বাহ্যিকতা সৃষ্টি করে এরূপ কাজকে নিরুৎসাহিত করে। এরা ঔদার্য উৎসাহিত করে। তারা ব্যক্তিকে কঠোর পরিশ্রম করতে, ন্যায্য মূল্য চাইতে এবং অন্যান্যদেরকে তাদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করতে উদ্ধুদ্ধ করে। এ সকল নিয়মের উদ্দেশ্য হচ্ছে, স্বার্থপর ও অর্পনেচ্ছু অর্থনৈতিক মানুষকে উৎকৃষ্ট গুণাবলীসম্পন্ন ইসলামী মানুষে রূপান্তরিত করা। একজন ইসলমী মানুষ স্বাধীনভাবে সম্পত্তি অর্জন করে, কিন্তু কখনও ফটকা কারবার, জুয়া, মজুদদারী কিংবা ধ্বংসাত্মক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সম্পত্তি অর্জন করে না। সে যদিও সবসময় ভাল দামে জিনিস বিক্রয় করতে চায়, সে সবসময় তার লেনদেনের অংশীদারের ন্যায্য ব্যবহারের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকে।
এভাবে ইসলামী অর্থনীতি ধনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক উভয় প্রকার অর্থনীতি থেকে পৃথক। ইসলামী দৃষ্টিকোন থেকে ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত, আবার সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে তা খুবই সংকীর্ণ। ইসলামী অর্থনীতি একটি তত্ত্বীয় পন্থা যা অর্থনৈতিক স্বাধীনতাকে কাম্য স্তরে সীমিত করে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions