চাহিদা কাকে বলে
সাধারণতঃ কোন নির্দিষ্ট সময়ে একটি নির্দিষ্ট দামে একজন ব্যক্তি কোন দ্রব্যের যে পরিমাণ দ্রব্য কিনতে প্রস্ত্তত থাকে তাকে ঐ দ্রব্যের চাহিদা বলে। এখানে ‘‘কিনতে প্রস্ত্তত থাকে’’ এর মধ্যে তিনটি বৈশিষ্ট্য লুকায়িত থাকে। প্রথমে ব্যক্তির ঐ দ্রব্যটি কিনার ইচ্ছা থাকতে হবে, দ্বিতীয়তঃ দ্রব্যটি কিনার জন্য তার হাতে প্রয়োজনীয় অর্থ থাকতে হবে এবং সবশেষে তার ঐ টাকা ব্যয়ের ইচ্ছা থাকতে হবে। উদাহরণ : মনে করি, একজন ব্যক্তি আলু কিনার জন্য বাজারে গেল। বাজারে গিয়ে দেখল যে এক কেজি আলুর দাম ১০ টাকা এখন তার ২ কেজি আলু কিনার আকাংক্ষা থাকতে হবে, তার পকেটে ২০ টাকা বা তার চেয়ে বেশী থাকতে হবে এবং ঐ টাকাটা খরচ করার ইচ্ছা থাকতে হবে। তবেই বলা যাবে ঐ ব্যক্তির আলুর চাহিদা হল ২ কেজি।
চাহিদা বিধি
আমরা চাহিদার যে সংজ্ঞা পড়লাম তাতে দেখতে পেলাম যে কোন দ্রব্যের চাহিদা প্রধানতঃ তার নিজস্ব দামের উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ পণ্যের চাহিদা ও দামের মধ্যে একটা আপেক্ষিক সম্পর্ক বিদ্যমান। এই সম্পর্ককে একটি নিয়মের মাধ্যমে প্রকাশই হল চাহিদা বিধি। বিধিটি হল : অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে কোন দ্রব্যের নিজস্ব দাম বাড়লে তার চাহিদা কমে এবং কমলে তার চাহিদা বাড়ে। অর্থাৎ দ্রব্যের চাহিদা আর তার দামের মধ্যে বিপরীত সম্পর্ক বিদ্যমান। অর্থাৎ একটি বাড়লে অন্যটি কমবে। যেমন : মনে করি এক কেজি আলুর দাম যখন ১০ টাকা তখন একজন ব্যক্তি ২ কেজি আলু ক্রয় করে। এখন যদি দাম বেড়ে ১১ টাকা হয়ে যায় তখন সে ২ কেজি না কিনে ১ কেজি ক্রয় করে। আর আলুর দাম যখন ৮ টাকা তখন সে ৪ কেজি আলু ক্রয় করে। এখন দেখা যাচ্ছে যে, দাম যখন বেড়ে যায় তখন তার চাহিদা কমে যায়। আবার যখন দাম কমে যায় তখন তার চাহিদা বেড়ে যায়। অর্থাৎ আলুর দাম ও তার চাহিদার মধ্যে বিপরীত সম্পর্ক বিদ্যমান, এটিই হল চাহিদা বিধি।
চাহিদা সূচী ও চাহিদা রেখা কোন দ্রব্যের দাম ও চাহিদাকে পাশাপাশি রেখে যখন আমরা ছকে প্রকাশ করি তখন তাকে চাহিদাসূচী বলে।
চাহিদার নির্ধারকসমূহ
পরিবর্তক ও পরিপূরক দ্রব্য
আমরা দেখেছি যে, কোন দ্রব্যের চাহিদা সম্পর্কিত দ্রব্যের দাম দ্বারাও প্রভাবিত হয়। সম্পর্কিত দ্রব্য আবার দুই প্রকারের হতে পারে : (১) পরিবর্তক দ্রব্য (২) পরিপূরক দ্রব্য।
পরিবর্তক দ্রব্য যখন দুটি দ্রব্যের মধ্যে একটিকে অপরটির পরিবর্তে ব্যবহার করা যায়, তখন দ্রব্য দুটির একটিকে অপরটির পরিবর্তক দ্রব্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়। যেমন : মনে করি চিনির দাম যখন ২০ টাকা তখন একজন ব্যক্তি মাসে ২ কেজি গুড় ক্রয় করে। কিন্তু চিনির দাম বেড়ে ২৫ টাকা হয় তখন সে দুই কেজি গুড় ক্রয় না করে আরও বেশী গুড় ক্রয় করে (২.৫০) অর্থাৎ চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যক্তি কিছু চিনির পরিবর্তে কিছু গুড় ক্রয় করলো। অর্থাৎ গুড়কে চিনির পরিবর্তক হিসাবে ব্যবহার করল। তেমনি যদি আবার চিনির দাম ২০ টাকা থেকে কমে ১৫ টাকা হয় তবে ব্যক্তি হয়ত ২ কেজি গুড়ের চেয়ে কম গুড় ক্রয় করবে (১ কেজি)। চিনির দাম কমে যাওয়ায় সে একটু বেশী চিনি ক্রয় করবে। অর্থাৎ গুড়ের পরিবর্তে চিনি ক্রয় করবে। এখানে ভোক্তা চিনিকে গুড়ের পরিবর্তক হিসাবে ব্যবহার করল।
এখানে চিনি ও গুড় একে অপরের পরিবর্তক দ্রব্য। এখানে দেখা যাচ্ছে যে চিনির দামের সাথে গুড়ের চাহিদার সম্পর্ক ধনাত্মক। অর্থাৎ পরিবর্তক দ্রব্যের ক্ষেত্রে একটি পণ্যের দাম ও অপরটির চাহিদার সম্পর্ক ধনাত্মক।
পরিপূরক দ্রব্য
যখন একটি দ্রব্যের ব্যবহারের জন্য অপর একটি দ্রব্যের ব্যবহার অত্যাবশ্যক হয় তখন দ্রব্য দুটির একটিকে অপরটির পরিপূরক বলে। যেমন : কালি ও কলমের কথা বলা যায়। কালি ছাড়া কলমের ব্যবহার করা যায় না, তেমনি আবার কলমের ব্যবহারের জন্য কালির ব্যবহার অত্যাবশ্যক। অর্থাৎ কালির দামের সাথে কলমের সম্পর্ক রয়েছে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions