চাহিদার প্রকারভেদ
আমরা জানি, কোন দ্রব্যের চাহিদা ভোক্তার রুচি, পছন্দ আবহাওয়া ইত্যাদি উপাদানের উপর নির্ভর করে। এই নির্ভরশীলতার উপর ভিত্তি করে চাহিদা প্রধানত তিন প্রকার। ১। দাম চাহিদা ২। আয় চাহিদা ৩। আড়াআড়ি চাহিদা
১। দাম চাহিদা (Price Demand)
অন্যান্য অবস্থা পরিবর্তিত থেকে শুধুমাত্র দামের পরিবর্তনের কারণে চাহিদার পরিবর্তন হলে তাকে দাম চাহিদা বলে। দাম চাহিদা রেখার দ্বারা বিভিন্ন দামে বিভিন্ন চাহিদার পরিমাণের সম্পর্ক প্রকাশ পায়।
২। আয় চাহিদা (Income Demand)
অন্যান্য অবস্থা স্থির থেকে শুধুমাত্র আয়ের পরিবর্তনের ফলে ভোক্তার চাহিদার যে পরিবর্তন হয় তাকে আয় চাহিদা বলে। আয়ের বিভিন্ন পরিমাণের সাথে চাহিদার বিভিন্ন পরিমাণের যে সম্পর্ক তাকে আয় চাহিদা রেখা দ্বারা প্রকাশ করা হয়। স্বাভাবিক দ্রব্যের বেলায় আয় চাহিদা রেখা উর্ধ্বগামী। কারণ আয়ও চাহিদার মধ্যে ধনাত্মক সম্পর্ক বিদ্যমান। অর্থাৎ ব্যক্তির আয় যত বাড়বে কোন দ্রব্যের বেলায় ব্যক্তির চাহিদাও তত বাড়বে। আর নিকৃষ্ট দ্রব্যের বেলায় আয় চাহিদা রেখা নিম্নগামী। কারণ ব্যক্তির আয় আর নিকৃষ্ট দ্রব্যের চাহিদার মধ্যে বিপরীত সম্পর্ক বিদ্যমান। নিকৃষ্ট দ্রব্য হল সে সব দ্রব্য যেসব দ্রব্যকে ভোক্তা আয় বৃদ্ধি পেলে পরিত্যাগ করতে চায়। অর্থাৎ আয় বৃদ্ধি পেলে যেসব দ্রব্যের চাহিদা কমে যায় তাকে নিকৃষ্ট দ্রব্য বলে।
৩। আড়াআড়ি চাহিদা (Cross Demand)
আমরা চাহিদার নির্ধারক সমূহ আলোচনার সময় দেখেছি যে, কোন দ্রব্যের দামের উপরও নির্ভর করে। আর আমরা এও জানি যে, সম্পর্কিত দ্রব্য দুই প্রকার : ১। পরিবর্তক দ্রব্য ২। পরিপূরক দ্রব্য।
অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত থেকে শুধুমাত্র এই সম্পর্কিত দ্রব্যের চাহিদার যে পরিবর্তন হয় তাকে সে দ্রব্যের আড়াআড়ি চাহিদা বলে। যেমন x, y দুটি সম্পর্কিত দ্রব্য। এখন y এর দাম পরিবর্তিত হলে x দ্রব্যের চাহিদার যে পরিবর্তন হয় তাকেী দ্রব্যের আড়াআড়ি চাহিদা বলে।
চাহিদা বিধির ব্যতিক্রম
চাহিদা বিধি হতে আমরা জানি যে, দ্রব্যের দাম বাড়লে তার চাহিদা কমে। আর দ্রব্যের দাম কমলে তার চাহিদা বাড়ে। অর্থাৎ দ্রব্যের দাম ও চাহিদার মধ্যে বিপরীত সম্পর্ক বিদ্যমান। কিন্তু এই চাহিদা বিধির ব্যতিক্রম দেখতে পাওয়া যায়। অর্থাৎ অনেক সময় আমরা এমন কিছু অবস্থার সম্মুখীন হই যখন দ্রব্যের দাম হ্রাস পেলেও তার চাহিদা কমে যায় বা দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেলেও তার চাহিদা বাড়ে। একেই বলে চাহিদা বিধির ব্যতিক্রম। নিম্নে চাহিদা বিধির কিছু ব্যতিক্রম আলোচনা করা হলো :
ক) সামাজিকভাবে মর্যাদাপূর্ণ দ্রব্য : থর্সষ্টেইন ভেবলন নামের একজন অর্থনীতিবিদ মনে করেন যে চাহিদা বিধিকে সবসময় উপযুক্ত বলে মনে করা ঠিক নয়। এক্ষেত্রে তিনি উদাহরণ হিসাবে সামাজিকভাবে মর্যাদাপূর্ণ দ্রব্য যেমন হীরকের কথা উলে-খ করেন। হীরকের দাম যখন বেশী থাকে তখন তার চাহিদাও সমাজের উঁচু শ্রেণীর মানুষের কাছে বেশী। আবার হীরকের দাম যখন কমে যায় তখন তার চাহিদাও বাড়ে না। কারণ হীরকের দাম কমে গেলে তার সামাজিক মর্যাদাও কমে যায় এবং সমাজের উঁচু শ্রেণীর মানুষের নিকট তার চাহিদাও কমে যায়। এক্ষেত্রে চাহিদা বিধির ব্যতিক্রম দেখা যায়, অর্থাৎ এখানে হীরকের দামের সাথে তার চাহিদার ধনাত্মক সম্পর্ক বিদ্যমান।
খ) গিফেন দ্রব্য : রবার্ট গিফেন নামের একজন অর্থনীতিবিদ উনবিংশ শতাব্দীতে বৃটেনে যারা কম আয় সম্পন্ন শ্রমিক তাদের চাহিদার প্রকৃতি বিশ্লেষণ করেন। সেখানে দেখা গিয়েছিল যে পাউরুটির দাম যখন বৃদ্ধি পায় তখন তারা বেশী পরিমাণে পাউরুটি ক্রয় করে। কারণ পাউরুটির দাম যখন বেড়ে যায় তখন একই পরিমাণ দ্রব্যের জন্য তাদেরকে বেশী খরচ করতে হয়। ফলে তাদের হাতে অন্যান্য দ্রব্য কিনার জন্য কম টাকা থাকে। তাই তারা ভবিষ্যৎ দাম বৃদ্ধির আশংকায় আগের চেয়ে বেশী রুটি ক্রয় করবে। অর্থাৎ রুটির দাম বাড়লেও তারা বেশী রুটি ক্রয় করে। আবার রুটির দাম কমলে অন্যান্য দ্রব্য কিনার জন্য তাদের হাতে বেশী টাকা থাকে। তখন তারা রুটির পরিমাণ কমিয়ে অন্যান্য উৎকৃষ্ট দ্রব্য ক্রয় করবে। অর্থাৎ রুটির দাম কমলে তারা কম রুটি ক্রয় করে। অতএব এখানে দেখা যাচ্ছে যে রুটির দামের সাথে চাহিদার সরাসরি সম্পর্ক বিদ্যমান। এখানে রুটি হল গিফেন দ্রব্য এবং এই গিফেন দ্রব্যের ক্ষেত্রে চাহিদা বিধি কার্যকর হয়না।
গ) আরও দাম বৃদ্ধির প্রত্যাশা : কোন কোন দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেলে ক্রেতাগণ মনে করে যে এর দাম ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। ফলে তাদের ঐ দ্রব্যের জন্য চাহিদা বৃদ্ধি পায়। যেমন কোন শেয়ার বাজারের শেয়ারের দাম কমলে জনগণ মনে করে যে এর দাম আরও কমবে এতে শেয়ারের চাহিদা কমে যায়। এখানেও দেখা যাচ্ছে যে শেয়ারের দামের সাথে শেয়ারের চাহিদার সরাসরি সম্পর্ক বিদ্যমান যা চাহিদা বিধির ব্যতিক্রম।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions