ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগ বিধি
ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগ বিধি ইঞ্জিনিয়ার হেনরিখ গোসেন সর্বপ্রথম এ বিধিটির ধারণা উল্লেখ করলেও তার সুষ্পষ্টরূপ দেন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আলফ্রেড মার্শাল।
অনুমিতিসমূহ:
এ বিধিটি নিম্নোক্ত কতিপয় অনুমিতির উপর প্রতিষ্ঠিত।
১. উপযোগের সংখ্যাগত পরিমাপ সম্ভব।
২. ভোক্তার পছন্দ, রুচি, আয় অপরিবর্তিত।
৩. কোন দ্রব্যের উপযোগ একটি স্বাধীন অপেক্ষক। অর্থাৎ কোন দ্রব্যের উপযোগ কেবলমাত্র ঐ দ্রব্যের ভোগের উপর নির্ভরশীল অন্য দ্রব্যের উপর নয়।
৪. ভোক্তা দ্রব্যের প্রতিটি এককের ভোগ একটি নির্দিষ্ট সময়ে ক্রমান্বয়ে সম্পন্ন করে।
৫. ভোগের প্রাথমিক এককগুলো তৃপ্তির জন্য পর্যাপ্ত হতে হবে এবং প্রতিটি একক সমজাতীয়। দ্রব্যটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এককে বিভাজ্য হবে।
৬. ভোক্তার আচরণ যুক্তিসঙ্গত।
বিধিটির মূল বক্তব্য
সাধারণতঃ মানুষের অভাব অসীম। কিন্তু কোন নির্দিষ্ট সময় কোন বিশেষ দ্রব্যের অভাব সসীম। অভাবের এই বৈশিষ্ট্য থেকে এ বিধির উদ্ভব। কোন ভোক্তা যখন কোন নির্দিষ্ট সময়ে কোন একটি দ্রব্য ক্রমাগতভাবে ভোগ করতে থাকে তখন সে দ্রব্যের প্রতি তার আসক্তি আস্তে আস্তে কমে যায়। তাই অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে কোন নির্দিষ্ট সময়ে একজন ভোক্তা কোন একটি দ্রব্য ক্রমাগতভাবে ভোগ করতে থাকলে ঐ দ্রব্য থেকে প্রাপ্ত মোট উপযোগ ক্রম হ্রাসমান হারে বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ প্রান্তিক উপযোগ হ্রাস পেতে থাকে। কোন দ্রব্যের ভোগ বৃদ্ধির ফলে প্রান্তিক উপযোগ হ্রাস পাওয়ার এরূপ প্রবণতাকে ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগ বিধি বলে। অধ্যাপক মার্শালের মতে, ‘‘কোন দ্রব্যের মজুত বৃদ্ধির ফলে একজন ব্যক্তি যে অতিরিক্ত উপযোগ লাভ করে তা ঐ দ্রব্যের মজুত বৃদ্ধির সাথে সাথে হ্রাস পায়।’’ বোল্ডিং এর মতে, ‘‘অন্য সব দ্রব্যের ভোগ অপরিবর্তিত রেখে যদি কোন ভোক্তা কোন একটি দ্রব্যের ভোগ বৃদ্ধি করে তাহলে পরিবর্তনীয় দ্রব্যটির প্রান্তিক উপযোগ পরিশেষে হ্রাস পাবেই।’’
ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগ বিধির ব্যতিক্রম:
ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগ বিধিটির কতিপয় ব্যতিক্রম নিম্নে উল্লেখ করা হলো:-
১. এককের পরিমাণ : দ্রব্যের একক যদি যথার্থ না হয়, তাহলে এ বিধির ব্যতিক্রম দেখা দিবে। যেমন- একজন তৃষ্ণার্তকে এক গ-াস পানির পরিবর্তে এক চামচ পানি দেয়া হলে দ্বিতীয় চামচের জন্য তার আসক্তি বেড়ে যাবে।
২. অভ্যাস ও রুচির পরিবর্তন : ভোক্তার অভ্যাস ও রুচির পরিবর্তন হলে বিধিটি কার্যকর হবে না। যেমন- একজন মদ্যপায়ী যত বেশি মদ পায় তত বেশি আসক্ত হয়ে পড়ে।
৩. সময়ের ব্যবধান : বিধিটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সম্পৃক্ত অর্থাৎ দ্রব্যের বিভিন্ন একক ভোগের মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধান বেশি হলে বিধিটি কার্যকর নাও হতে পারে। যেমন- ভোক্তা প্রথম কমলা খাওয়ার কয়েক ঘন্টা পর দ্বিতীয় কমলা খেলে তার প্রতি আসক্তি না কমে বাড়তেও পারে।
৪. শখের দ্রব্য : শখের দ্রব্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে এ বিধিটি কার্যকর হয় না। যেমন- ডাক টিকিট, পুরাতন মুদ্রা, কীর্তিমার মূর্তি ইত্যাদি সংগ্রহের ক্ষেত্রে এ বিধিটি কর্যকর হয় না।
৫. কৃপণের ক্ষেত্রে : কৃপণ যত বেশি সম্পদ অর্জন করে তার প্রতি কৃপণের আসক্তি আরও বেড়ে যায়।
৬. বিকল্প ও পরিপূরক দ্রব্য : কোন দ্রব্যের প্রান্তিক উপযোগ কোন সে দ্রব্যের ভোগের উপরই নির্ভর করে না, বরং বিকল্প ও পরিপূরক দ্রব্যের দামের উপরও নির্ভরশীল।
৭. আয় বৃদ্ধি : ভোক্তার আয় বৃদ্ধি পেলে এ বিধির ব্যতিক্রম দেখা দেয়।
৮. অনুরুপের প্রভাব : অনুকরণপ্রিয় হয়ে ভোগের ইচ্ছা হলে এ বিধি কার্যকর হয় না। যেমন- মহিলারা অনুকরণের বশবর্তী হয়ে ভিন্ন ডিজাইনের অলংকার বানাতে চায় পুরানো থাকা সত্ত্বেও এক্ষেত্রে অলংকারের প্রতি তাদের আসক্তি কমে না, বরং বাড়ে।
৯. আবেগের ক্ষেত্রে : অনেক সময় আবেগের বসবর্তী হয়ে কোন দ্রব্যের প্রতি ভোক্তর আসক্তি বেড়ে যায়। ফলে এ ক্ষেত্রে এ বিধি কার্যকর হয় না। যেমন- কোন প্রিয় শিল্পীর গানের ক্যাসেটের প্রতি মানুষের আসক্তি বাড়ে।
১০. প্রতিপত্তি সম্পন্ন দ্রব্য : সমাজে প্রভাব প্রতিপত্তি লাভের জন্য ভোক্তা যে দ্রব্য সংগ্রহ করে সেক্ষেত্রে এ বিধি প্রযোজ্য নাও হতে পারে।
১১. অন্যের মজুত : অনেক দ্রব্য আছে যাদের উপযোগ শুধু তার মজুতের উপর নির্ভর করে না, অন্যের মজুতের উপরও নির্ভর করে। যেমন- টেলিফোন গ্রাহকের সংখ্যা বাড়লে তা উপযোগ না কমে বেড়ে যায়।
ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগ বিধির ব্যতিক্রম/সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও ভোক্তার আচরণ বিশ্লেষণে তার গুরুতব তাৎপর্যপূর্ণ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions