ভোক্তার উদ্বৃত্ত কি
ভোক্তার উদ্বৃত্ত (Consumer's Surplus)
অধ্যাপক আলফ্রেড মার্শালই মূলতঃ ভোক্তার উদ্বৃত্ত ধারণাটির প্রণেতা। তাঁর মতে, ‘‘ ভোক্তা কোন দ্রব্যের কোন পরিমাণের জন্য উচ্চ দাম দিতে রাজী থাকে অথচ যে নিম্নদাম প্রদান করে অতিরিক্ত সুবিধা ভোগ করে থাকে তাকেই ভোক্তার উদ্বৃত্ত বলে’’। ক্রেতা কোন দ্রব্যের বিভিন্ন একক যে দামে ক্রয় করতে ইচ্ছুক এবং প্রকৃতপক্ষে যে দামে ক্রয় করে, এ দু’য়ের পার্থক্য হল ভোক্তার উদ্বৃত্ত। কোন দ্রব্যের জন্য ভোক্তা যে দাম দিতে রাজী তা হলো ক্রেতার চাহিদা দাম। আর প্রকৃত পক্ষে সে যে দাম দেয় তা হলো বাজার দাম। এ দু’য়ের পার্থক্য হলে ভোক্তার উদ্বৃত্ত।
ভোক্তার উদ্বৃত্ত ধারণাটি ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগ বিধির উপর নির্ভরশীল। চাহিদা রেখার প্রান্তিক উপযোগভিত্তিক বিশে-ষণ থেকে জানি যে, প্রান্তিক উপযোগ ও বাজার দাম সমান, কোন দ্রব্যের ভোগের পরিমাণ বৃদ্ধি করলে তার প্রান্তিক উপযোগ হ্রাস পায় এবং তা অবশেষে দামের সমান হয়। এ কারণে ভোক্তা দ্রব্য ক্রয়ের পরিমাণ বাড়িয়ে যাবে যতক্ষণ না প্রান্তিক উপযোগ দামের সমান হয় এবং যে এককে দাম ও প্রান্তিক উপযোগ সমান হবে তার পূর্ববর্তী একক সমূহ হতে যে উদ্বৃত্ত উপযোগ ভোক্তা লাভ করে তা-ই তার উদ্বৃত্ত।
সমালোচনা:
ভোক্তার উদ্বৃত্ত ধারণাটি নিম্নোক্ত কতিপয় সমালোচনার সম্মুখীন :
১. ভোক্তার উদ্বৃত্ত অর্থের মাধ্যমে পরিমাপযোগ্য নয়
২. এ তত্ত্বে ধরে নেয়া হয়েছে অর্থের প্রান্তিক উপযোগ স্থির যা সঠিক নয়।
৩. ব্যক্তিগত চাহিদা দাম নিতান্তই কাল্পনিক বিষয়।
৪. এ তত্ত্ব ব্যক্তির ভোগ উদ্বৃত্ত পরিমাপ করতে পারলেও গোটা সমাজের জন্য পারে না।
৫. অতি প্রয়োজনীয় দ্রব্যের জন্য মানুষ যে কোন মূল্য দিতে প্রস্ত্তত বলে সেক্ষেত্রে ভোক্তার উদ্বৃত্ত অপরিসীম।
৬. বিলাস ও জাঁকজমকপূর্ণ দ্রব্যের ক্ষেত্রে এ বিধি কার্যকর নয়।
৭. পরিবর্তক ও পরিপূরক দ্রব্যের ক্ষেত্রে ভোক্তার উদ্বৃত্ত পরিমাপ করা অসুবিধাজনক। কেননা তাদের ভোগ নিজের দাম ছাড়াও অন্যের দামের উপর নির্ভরশীল।
ভোক্তার উদ্বৃত্ত ধারণাটির গুরুত্ব
ভোক্তার উদ্বৃত্ত ধারণাটির কিছু ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও তার তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক গুরুত্ব রয়েছে।
১. ব্যবহারিক ও বিনিময় মূল্য সম্পর্কে ধারণা : ভোক্তার উদ্বৃত্ত ধারণাটি কোন দ্রব্যের ভোগোদ্বৃত্ত না থাকলে তার ব্যবহারিক ও বিনিময় মূল্য পরস্পর সমান হয়। ভোগোদ্বৃত্ত বেশি হলে দ্রব্যের ব্যবহারিক মূল্য বিনিময় মূল্যের চেয়ে বেশি হয়।
২. আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের লাভ নির্ধারণ : এ তত্ত্বের সাহায্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের লাভ নির্ধারণ করা যায়। অর্থাৎ কোন দেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হতে লাভ পাচ্ছে কিনা তা এ ধারণার মাধ্যমে জানা যায়।
৩. একচেটিয়া কারবারীর নিকট গুরুত্ব : একচেটিয়া কারবারীর দ্রব্যমূল্য নির্ধারণে ভোক্তার উদ্বৃত্ত ধারণাটির গুরুত্ব রয়েছে। ভোক্তার নিকট যে পরিমাপ উদ্বৃত্ত রয়েছে একচেটিয়া কারবারী দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে সর্বাধিক সে পরিমাণ উদ্বৃত্ত আদায় করে নিতে পারে। এ বিষয়টি বিবেচনা করে সে তার দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করতে পারে।
৪. কর আরোপের ক্ষেত্রে : কর আরোপের ক্ষেত্রে এ ধারণাটির গুরুত্ব অপরিসীম, পরোক্ষ কর আরোপের ফলে দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পায় আর ভোক্তার উদ্বৃত্ত হ্রাস পায়। তাই এ ধরনের কর আরোপের সময় সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে যেন সরকারের রাজস্ব যে হারে বাড়ে ভোক্তার উদ্বৃত্ত সে হারে না কমে।
৫. ভতুর্কির ক্ষেত্রে : অনেক সময় অধিক খরচে উৎপাদিত ক্রেতারা যাতে কম দামে ক্রয় করতে পারে সে জন্য সরকার উৎপাদন প্রতিষ্ঠানকে ভর্তুকি প্রদান করে। ভর্তুকি প্রদানের ফলে ভোক্তার উদ্বৃত্ত সৃষ্টি হয়। যেসব দ্রব্যের ক্ষেত্রে সৃষ্ট ভোক্তার উদ্বৃত্তের পরিমাণ ভর্তুকির চেয়ে বেশি হয় সে দ্রব্যের উৎপাদককে ভর্তুকি দেয়া বাঞ্ছনীয়।
৬. প্রকৃত আয় নির্ধারণে : অর্থনীতিতে সাধারণ মূল্যস্তর বেশি হলে ভোক্তার উদ্বৃত্ত কম হয় এবং জনসাধারণের প্রকৃত আয় এবং জীবনযাত্রার মান কম হয়। আবার মূল্যস্তর কম হলে ভোক্তার উদ্বৃত্ত বেশি হয় এবং জীবনযাত্রার মানও বেশি হয়।
৭. জনকল্যাণমূলক ব্যয়ের ক্ষেত্রে এ বিবরণটির গুরুত্ব রয়েছে। এ ধরনের ব্যয় বৃদ্ধির ফলে ভোক্তার উদ্বৃত্ত বৃদ্ধি পায়।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions