অংশীদারি ব্যবসায় কি
অংশীদারী ব্যবসায়: যে কারবারে পরস্পরের সাথে পরিচিত কয়েকজন ব্যক্তি একত্রিত হয়ে মূলধন সংগ্রহ করে যুক্তভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে তাকে অংশীদারী কারবার বলা হয়। অংশীদারীগণ একক এবং যৌথভাবে ব্যবসা পরিচালনার জন্য এবং ব্যবসায়ের ঋণের জন্য দায়ী থাকে। অংশীদারী কারবারে সকলের সমান অংশীদারী হবার প্রয়োজন নেই। তাঁরা নিজেদের মধ্যে চুক্তি সম্পাদন করে এর ভিত্তিতে বা শর্ত অনুযায়ী মূলধন দিয়ে থাকে এবং সেই অনুসারে লভ্যাংশ পেয়ে থাকে। এই কারবারের তিনটি বৈশিষ্ট্য আছে: (ক) অংশীদারীগণ সকলেই যুক্তভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে, (খ) অংশীদারগণের দায়িতব অসীম এবং (গ) অংশীদারগণের মধ্য থেকে কেউ মারা গেলে, পাগল হয়ে গেলে বা দেউলিয়া হয়ে গেলে এ ধরনের কারবার বন্ধ হয়ে যায়; ফলে এর স্থায়ীতব খুব কম। এরূপ কারবারে পাওনাদারগণ ইচ্ছা করলে যে কোন অংশীদারের কাছ থেকে সমস্ত ঋণের টাকা আইনত: আদায় করতে পারে। উলে-খ্য যে অংশীদারদের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে এ ধরনের সংগঠন কাজ করে।
অংশীদারী ব্যবসায়ের সুবিধাসমূহ
ক. গঠনের সুবিধা : অংশীদারী কারবার গঠনে আইনগত কোনরূপ বাধ্যবাধকতা নেই; ফলে সহজেই এ ধরনের কারবার গড়ে তোলা যায়।
খ. মূলধনের পর্যাপ্ততা : অংশীদারী কারবারের সকল অংশীদারগণ মূলধনের যোগান দেন, তাই ব্যক্তিগত কারবারের তুলনায় সকলের সমবেত চেষ্টায় পর্যাপ্ত মূলধন সংগ্রহ করা সম্ভব হয় যা দিয়ে বৃহদায়তন উৎপাদনের ব্যবস্থা করা যায়। এতে ব্যবসায়ী ও ভোক্তা উভয়েরই সুবিধা হয়।
গ. অসীম দায়িতব ও ঋণের সুবিধা : অংশীদারী ব্যবসায় অংশীদারগণ একক ও সম্মিলিতভাবে ব্যবসায়ের অসীম দায়ভার বহন করে বলে অংশীদারী কারবারে সহজে ঋণ পাওয়া যায়।
ঘ. শ্রম বিভাগের সুবিধা : এ ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন প্রকার প্রতিভা সম্পন্ন ব্যক্তির সমাবেশ ঘটতে পারে। তাদের দক্ষতা অনুযায়ী ব্যবসায়ের কাজ ভাগ করে দেওয়া যায়। যেমন - কেহ ব্যবসা পরিকল্পনা, কেহ উৎপাদন কাজ, কেহ বাজারজাত করণের কাজ, কেহ প্রশাসন প্রভৃতি দায়িতব পালন করলে গোটা ব্যবসা দক্ষতার সাথে সম্পন্ন হতে পারে।
ঙ. অধিক গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত : অংশীদারগণের আলাপ অলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এজন্য অধিকতর নির্ভরযোগ্য সিদ্ধান্ত এবং নির্ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়।
চ. ব্যবসায়ের সুনাম ও দক্ষতা : অংশীদারী কারবারে প্রত্যেক অংশীদারগণ তাদের দক্ষতা অনুযায়ী কাজ করে। এজন্য ব্যবসায়ের সুনাম ও দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং অধিক মুনাফা অর্জনের পথ সুগম করে।
ছ. স্থিতিস্থাপকতা : এ ধরনের কারবারে প্রয়োজনে অংশীদারের সংখ্যা বৃদ্ধি করা যায়। বিশেষ করে ব্যবসা সম্প্রসারণের তাগিদে নতুন অংশীদার গ্রহণ করা যায়।
অংশীদারি ব্যবসায়ের অসুবিধা
ক. অসীম দায়িতব : অংশীদারী কারবারে অংশীদারগণের অসীম দায়িতব এ ব্যবসায়ের প্রধান অসুবিধা। যদি ব্যবসায়ে লোকসান হয় তাহলে ঋণদাতা যে কোন অংশীদারের কাছ থেকে ঋণের সমস্তটাই আইনগতভাবে আদায় করতে পারে। অনেক সময় কোন অংশীদার কেবল তার মূলধন হারায় তাই নয় তার যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিও হারাতে পারে। সুতরাং এ ব্যবসায়ের ঝুঁকি অসীম।
খ. স্থায়ীত্বের অভাব : অংশীদারী কারবারের স্থায়ীতব কম। কোন অংশীদার মারা গেলে, উন্মাদ বা দেউলিয়া হলে আইনগতভাবে কারবার বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে বর্তমানে অংশীদারী কারবার সীমিত হয়ে পড়েছে এবং বর্তমানে যেগুলি আছে তা বিলুপ্ত হবার পথে।
গ. অপ্রচুর মূলধন : অংশীদারী কারবারে যদিও এক-মালিকানা কারবারের তুলনায় বেশি মূলধন সংগ্রহ করা সম্ভব, তথাপিও বতর্মানে বৃহদায়তন শিল্পের মূলধনের প্রয়োজনে অপর্যাপ্ত। মূলধনের অপর্যাপ্ততার জন্য এ ধরনের কারবার ক্রমশ: অপ্রিয় হয়ে পড়ছে।
ঘ. মতানৈক্য : অংশীদারগণের মধ্যে যে কোন কারণে মত বিরোধ দেখা দিতে পারে। তার ফলে ব্যসায়ের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে বা কখনো কখনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে অসুবিধা হতে পারে।
ঙ. অদক্ষতা অংশীদার : অংশীদারী কারবারে সকল অংশীদার সমযোগ্যতা সম্পন্ন নাও হতে পারে। ফলে এমন হতে পারে যে, একজন অংশীদারের অদক্ষতা গোটা ব্যবসাকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিতে পারে এবং এর দায়ভার সকলকে নিতে হতে পারে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions