ভূমি কাকে বলে
উৎপাদনের উপাদানগুলির মধ্যে প্রথম এবং প্রধান হল ভূমি। সাধারণ অর্থে ভূমি বলতে মৃত্তিকা বা ভূ-ত্বক বা ভূ-পৃষ্ঠকে বুঝায়। কিন্তু অর্থনীতিতে ‘ভূমি’ ধারণাটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। অর্থনীতিতে ভূমি বলতে উৎপাদনের সহায়ক সকল প্রকার প্রাকৃতিক সম্পদকে বুঝায়। পৃথিবীর ভূ- পৃষ্ঠ, জল-স্থল, আলো-বাতাস, বৃষ্টিপাত, মাটির উর্বরা শক্তি, নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত, সমুদ্র, খনিজ দ্রব্য, খাল-বিল প্রভৃতি সকল প্রকার প্রাকৃতিক সম্পদ ভূমির অন্তর্ভুক্ত। মানুষ এগুলি সৃষ্টি করতে পারে না। সুতরাং উৎপাদন কার্যে সহায়ক প্রাকৃতিক সকল সম্পদকে অর্থনীতিতে ‘ভূমি’ বলে।
ভূমির বৈশিষ্ট্য
ভূমি উৎপাদনের অন্যান্য উপাদান থেকে ভিন্ন। ভূমির বৈশিষ্ট্যসমূহই একে উৎপাদনের অন্যান্য উপাদানসমূহ থেকে পৃথক করে রেখেছে। নিম্নে ভূমির প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হল :
১. ভূমি প্রকৃতির দান : ভূমি প্রকৃতির দান, মানুষ ভূমি সৃষ্টি করেনি। এর কোন উৎপাদন খরচ বা দাম যোগান নেই। ফলে ভূমি সৃষ্টির জন্য মূলতঃ কোন প্রচেষ্টা বা ত্যাগ স্বীকারের প্রয়োজন হয় না। তবে এ ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয়। কারণ বন কেটে বসতি বা মরুভূমিতে জলসেচ করে বা সমুদ্র উপকূলে বাঁধ দিয়ে জমি উদ্ধার প্রভৃতি কাজে যে সফলতা অর্জিত হচ্ছে এটি অবশ্যই মানুষের চেষ্টার দান এবং এর যোগান দামও আছে। কিন্তু এরূপ প্রয়াস খুবই সীমিত। এজন্যই স্বল্পকালীন ভিত্তিতে জমির যোগান সীমাবদ্ধ ধরা হয়। আবার অনেক জমিকে চাষযোগ্য বা উর্বরা করে গড়ে তুলতে খরচ করতে হয়।
২. ভূমির যোগান সীমাবদ্ধ : ভূমির দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হল যে এর যোগান সীমাবদ্ধ। পৃথিবীতে ভূমিসহ প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ সীমাবদ্ধ। মানুষের চেষ্টায় এর হ্রাসবৃদ্ধি সম্ভব নয়। তবে ব্যবহারযোগ্য ভূমির পরিমাণে হ্রাসবৃদ্ধি ঘটতে পারে। মানুষের অবহেলা, ভূমিকম্প প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ যেমন হ্রাস পেতে পারে, তেমনি মানুষের প্রচেষ্টায় পতিত জমি পুনরুদ্ধার করে পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে।
৩. উর্বরাশক্তির তারতম্য : ভূমির অপর বৈশিষ্ট এই যে, সকল ভূমি সমজাতীয় বা একই গুণ সম্পন্ন নয়। অর্থাৎ সকল ভূমির উর্বরতা শক্তি একরূপ নয়। তেমনি সকল কয়লাখনিতে বা তেলকূপে একই জাতীয় কয়লা বা তেল পাওয়া যায় না। তাছাড়া অবস্থানের দিক থেকেও তারতম্য রয়ে গেছে। কোন জমি অবস্থানের দিক অন্যটির চেয়ে উন্নত থাকে।
৪. ভূমি স্থানান্তরযোগ্য নয় : ভূমি স্থানান্তর করা যায় না অর্থাৎ এক যায়গা থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু অন্যান্য উপাদান যেমন শ্রম ও মূলধন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর করা যায়। ভূমির ক্ষেত্রে ভৌগোলিক গতিশীলতা নেই।
৫. ভূমি স্থায়ী উপাদান : ভূমি অবিনশ্বর, এর কোন ক্ষয় নেই। তাই এটি একটি স্থায়ী উপাদান। কিন্তু অন্যান্য উপাদান যেমন, শ্রম, মূলধন প্রভৃতি অস্থায়ী।
৬. ভূমিতে হ্রাসমান উৎপাদন বিধি কার্যকর : কোন এক খন্ড জমিতে বেশি উৎপাদনের লক্ষ্যে অধিক পরিমাণ শ্রমিক ও মূলধন নিয়োগ করলেও উৎপাদন ক্রমশ হ্রাস পায়। এটাই হল ক্রমহ্রাসমান উৎপাদন বিধি। অন্যান্য উপাদানের ক্ষেত্রে এমনটি প্রযোজ্য হলেও ভূমির ক্ষেত্রেই এই বিধি বিশেষভাবে প্রযোজ্য।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions