শ্রম কাকে বলে
শ্রমের সংজ্ঞা: সাধারণ অর্থে শ্রম বলতে মানুষের কায়িক পারিশ্রমকে বুঝায়। কিন্তু অর্থনীতিতে শ্রম শব্দটি বিশেষ ও ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। উৎপাদন কাজে নিয়োজিত সকল প্রকার শারীরিক ও মানসিক কাজ ও সেবাকর্ম এবং যার বিনিময়ে পরিশ্রমিক পাওয়া যায় তাকেই শ্রম বলা হয়। একজন কৃষক, শিল্প শ্রমিক, বা রিকসা চালকের শারীরিক পরিশ্রম যেমন শ্রম, তেমনি একজন শিক্ষকের শিক্ষাদান বা ডাক্তারের পরামর্শ তেমনি তার বুদ্ধিজাত শ্রম। বস্ত্তত : মানুষ পরিশ্রমের বিনিময়ে যা কিছু অর্জন করে তাকেই শ্রম বলে। অবশ্য মানুষের সব কাজই শ্রম রূপে গণ্য নয়। কোনরূপ অর্থ উপার্জন ছাড়া কেবল স্নেহের জন্য বা আনন্দ লাভের জন্য যে পরিশ্রম করা হয় তা শ্রম নয়। তাই সন্তান প্রতিপালনের জন্য মাতা-পিতার পরিশ্রম বা কষ্টকে শ্রম বলা হয় না।
শ্রমের বৈশিষ্ট্য
শ্রম উৎপাদনের একটি আদি ও মৌলিক উপাদান। উৎপাদনের উপাদান হিসেবে শ্রমের কতকগুলো বৈশিষ্ট্য আছে।
নিচে এগুলো আলোচনা করা হল :
১. শ্রম একটি জীবন্ত উপাদান : শ্রমের প্রধান বৈশিষ্ট্য এই যে, এটি ভূমি ও মূলধনের মতো প্রাণহীন একটি জড় পদার্থ নয়। শ্রম শ্রমিকের দৈহিক ও মানসিক শক্তি একটি জীবন্ত উপাদান। পারিশ্রমিকের জন্য শ্রমিক পরিশ্রম দিলেও তার অনুভূতি সত্ত্বা থাকে। শ্রমিকের জীবদ্দশায় তার শ্রম জীবন্ত ও কর্মক্ষম থাকে।
২. শ্রম ও শ্রমিক অবিচ্ছেদ্য : শ্রমের অন্য একটি বৈশিষ্ট্য হল যে শ্রমিক ও শ্রম অবিচ্ছেদ্য। ভূমি ও ভূমির মালিক, মূলধন ও মূলধনের মালিক এক নয়, এরা স্বতন্ত্র। কিন্তু শ্রমিক থেকে শ্রমকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না।
৩. শ্রম গতিশীল : শ্রমের আর একটি বৈশিষ্ট্য হল যে এটি অন্যান্য উৎপাদনের তুলনায় গতিশীল। ভূমির কোন ভৌগোলিক গতিশীলতা নেই, মূলধনের গতিশীলতাও কম। কিন্তু শ্রম অত্যন্ত গতিশীল। কারণ, বিশেষ করে বর্তমানকালে শ্রমিক একস্থান থেকে অন্যস্থানে, এক পেশা থেকে অন্য পেশায় চলে যেতে পারে।
৪. শ্রম ক্ষণস্থায়ী : শ্রমের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল যে, এটি ক্ষণস্থায়ী এবং এর সঞ্চয় সম্ভব নয়। অন্যান্য উপাদান যেমন, ভূমি ও মূলধন কিছুকাল ব্যবহার না করলেও তা ধ্বংস হয়ে যায় না; কিন্তু শ্রম উৎপাদন কাজে ব্যবহার না করলে নষ্ট হয়ে যায়। কোন শ্রমিক একদিন বা এক ঘন্টা কাজ না করলে ঐ সময় নষ্ট হয়ে যায়, যা কোনদিন ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়।
৫. শ্রমিকের দর কষাকষির ক্ষমতা কম : উদ্বৃত্ত শ্রমিকের দেশে বিশেষ করে শ্রমের ক্ষণস্থায়ী চরিত্রের কারণে দর কষাকষিতে শ্রমিকদের অবস্থান সুবধিাজনক হয় না। বেশি দিন বেকার থাকার ঝুঁকি অনেকে নিতে চান না। এজন্য স্বল্প মজুরীতে অনেক শ্রমিক কাজ করেন। অবশ্য শ্রমিকগণ ট্রেড-ইউনিয়নের মাধ্যমে মালিক পক্ষের সাথে দর কষাকষি করতে পারে।
৬. উৎপাদন ক্ষেত্রে শ্রমিকের উপস্থিতি অপরিহার্য : জমিতে ফসল ফলাতে জমির মালিকের উপস্থিতি অপরিহার্য নয়। কিন্তু উৎপাদনের সময় শ্রমিকের উপস্থিতি অপরিহার্য। স্বশরীরে উপস্থিত থেকেই তাকে শ্রমের যোগান দিতে হয়।
৭. শ্রমের যোগানের হ্রাসবৃদ্ধি সময় সাপেক্ষ : শ্রমের যোগান ভূমির মতো একেবারে নির্দিষ্ট না হলেও এর হ্রাস বৃদ্ধি সময় সাপেক্ষ। তাই শ্রমের চাহিদা পরিবর্তনের সাথে সাথে এর যোগানের পরিবর্তন সম্ভব নয়। কারণ, শ্রমের যোগান একটি দেশের জন্মহার, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ প্রভৃতি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। তাই মজুরী বাড়লেও শ্রমের যোগান দ্রুত বাড়ে না, আবার মজুরী কমলেও যোগান দ্রুত কমেনা। তাই স্বল্পকালে শ্রমিকের যোগান সীমাবদ্ধ থাকে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions