কর্তৃত্বের প্রকারভেদ
কর্তৃত্বের ধরন (Types of authority)
প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার তিন ধরনের কর্তৃত্বের উল্লেখ করেছেন। এগুলো হচ্ছে:
১। প্রচলিত বা ঐতিহ্যগত কর্তৃত্ব;
২। সম্মোহনী বা আকর্ষণীয় কর্তৃত্ব এবং
৩। যৌক্তিক-আইনগত কর্তৃত্ব।
১। ঐতিহ্যগত কর্তৃত্ব (Traditional authority):
ঐতিহ্যগত কর্তৃত্বের ভিত্তিমূল হচ্ছে অতীত এবং প্রচলিত প্রথা-ঐতিহ্য। এ কর্তৃত্বের অনুসারীরা প্রচলিত ধারণা, বিশ্বাস এবং নিয়মের কারণেই কর্তৃত্বকে মেনে নেয়। ঐতিহ্যগত কর্তৃত্বের উদাহরণ হিসেবে ওয়েবার পিতৃতান্ত্রিকতার উল্লেখ করেছেন। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্রিটেনের ‘রাজতন্ত্র' ঐতিহ্যগত নেতৃত্বের বড় উদাহরণ। ঐতিহ্যগত কর্তৃত্বের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য নিচে দেয়া হল:
১। পূর্ববর্তী দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে সমস্যার সমাধান করা হয়;
২। মৌলিক পরিবর্তনে আগ্রহী নয়;
৩। অতীতের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে;
৪। এর অনুসারীরা প্রথার (Custom) প্রতি বেশি অনুগত;
৫। ঐতিহ্যগত কর্তৃত্ব বংশপরম্পরায় চলে আসে।
২। সম্মোহনী কর্তৃত্ব (Charismatic authority):
গ্রিক শব্দ 'Charisma'-এর অর্থ হচ্ছে 'Gift'। সাধারণত মনে করা হয়। সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত কতকগুলো ব্যতিক্রমধর্মী গুণাবলির জন্য বিশেষ কোনাে ব্যক্তি সম্মোহনী বা ঐন্দ্রজালিক কর্তৃত্বের অধিকারী হয়। সম্মোহনী কর্তৃত্বের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, "Charismatic authority is based on some extraordinary quality of the leader or the leader's ideas."
সম্মোহনী বা ঐন্দ্রজালিক কর্তৃত্বে অনুসারীরা নেতার মধ্যে অতিপ্রাকৃত (Supernatural) গুণাবলি আছে এবং নেতাকে একজন অতিমানব (Superman) বলে মনে করে। এ ধরনের কর্তৃত্বে নেতার সম্মোহন শক্তি বিলুপ্ত হলে নেতৃত্বও বিলুপ্ত হতে পারে। আবার নেতার আদর্শ যুগ যুগ ধরে কর্তৃত্ব অক্ষুন্ন রাখতে পারে। সম্মোহনী কর্তৃত্বের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে:
১। নেতার সম্মোহনী ব্যক্তিত্ব ও গুণাবলিই প্রধান;
২। কিছু অনুসারী থাকে, যারা অন্ধভাবে নেতার কর্তৃত্ব মেনে নেয়;
৩। অনেক ক্ষেত্রে এর আইনগত বৈধ্যতা থাকে না এবং এ কর্তৃত্ব যৌক্তিক না ও হতে পারে;
৪। নেতার অনুপস্থিতিতে তার আদর্শ কতৃত্বারোপ করতে পারে;
৫। নেতা বা তার আদর্শের সম্মোহনী প্রভাবের স্থায়িত্ব কর্তৃত্বের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে।
৩। যৌক্তিক-আইনগত কর্তৃত্ব (Rational-legal authority):
নিয়মকানুনের ভিত্তিতে সৃষ্ট সংগঠনে যে কর্তৃত্ব বিদ্যমান তাকে যৌক্তিক-আইনগত কর্তৃত্ব বলে। আইন এবং কাঠামোগত আদর্শের বলে কর্তৃত্ব প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যক্তি বা সংগঠনের কর্তৃত্ব প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। ওয়েবারের মতে, শুধু যৌক্তিক ও আইনগত কর্তৃত্বেরই আইনগত ভিত্তি এবং যৌক্তিকতা রয়েছে। যৌক্তিক আইনগত কর্তৃত্বের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য নিচে উল্লেখ করা হল:
১। সময়ের বাধ্যবাধকতা থাকে। ক্ষমতা/প্রশাসনে কে কত দিন কী দায়িত্ব পালন করবেন তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকে।
২। কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক পদগুলো উচ্চক্ৰম-নিম্নক্রম অনুসারে বিন্যস্ত থাকে।
৩। যোগ্যতা এবং কাজকেই (পেশা) জীবিকা বলে গণ্য করা হয় এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করা হয়।
৪। সবকিছু আনুষ্ঠানিক (Formal) হয়। ইচ্ছামত নিয়োগ-বরখাস্ত করা সম্ভব নয়।
৫। আইন এবং যুক্তি হচ্ছে এর মূলভিত্তি। | ৬। নিয়োগের জন্য যোগ্যতাকে প্রাধান্য দেয়া হয়।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions