প্রথা কি
প্রথা (Custom)
মানব সমাজে প্রথার উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে সে সম্পর্কে কোনো সুষ্ঠু ও সর্বজনগ্রাহ্য ধারণা লাভ করা যায় না। অনেকের অভিমত, সমাজে কোন কাজ পবিত্র তাই তা করণীয় কিংবা কোন কাজ অপবিত্র তাই নিষিদ্ধ, মানুষের এই উপলব্ধি থেকেই প্রথার সৃষ্টি। যখন সমাজ সহজ-সরল এবং জটিলতামুক্ত ছিল তখন সামাজিক প্রথার মাধ্যমে সমাজ শাসিত হতো। বংশ পরম্পরায় চলে আসা অনুশাসনের মাধ্যমেই সমাজ পরিচালিত হত। সামাজিক প্রথা ঐতিহ্যবাহী হওয়ায় সাধারণ মানুষের নিকট এর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। সামাজিক অনুষ্ঠানাদি কিভাবে সম্পন্ন হবে তা প্রথা দিয়েই নির্ধারিত হত। সমাজ সহজ সরল ও জটিলতা মুক্ত হওয়ার প্রত্যক ক্ষেত্রে সমস্যা সমাধান করা হতো সামাজিক প্রথার মাধ্যমে। তাই বলা হয় সমাজে প্রচলিত ও প্রতিষ্ঠিত এবং মানুষের আচার আচরণ নিয়ন্ত্রণকারী সমাজ অনুশাসনই হলো প্রথা। প্রথার সংজ্ঞা বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে প্রদান করেছেন:
অগবার্ন ও নিমকফ বলেন, “প্রথা হলো সেই সকল সামাজিক কার্যাবলি যা সমাজ অনুমোদিত এবং যার পৌনঃপুনিকতা আছে। ”
ম্যাকাইভার ও পেজ বলেন, “প্রথা হলো মানুষের আচরণবিধি বা রীতিনীতির জটিল সমষ্টি।” ।
জিসবার্ট প্রথার প্রধান তিনটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন। তা হলো- (ক) আচরণের ধারাবাহিকতা, (খ) সামাজিক প্রকৃতি এবং (গ) আদর্শগত মূল্যমান।
তাই বলা যায় যে, সমাজস্থ মানুষ প্রতিনিয়ত কতকগুলো নির্দিষ্ট রীতিনীতি বা বিধিবিধান মোতাবেক যেসব আচরণ করে যা সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত এবং বংশ পরম্পরায় চলে আসছে। এসব রীতিনীতি বা বিধি বিধানই হলো প্রথা।
প্রথার সামাজিক গুরুত্ব রয়েছে। কারণ প্রথার একটি ঐতিহ্য রয়েছে এবং তা চিরায়ত রীতিনীতির অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া সব সমাজেই প্রথা কম-বেশি বর্তমান। প্রথার সঙ্গে সমাজের প্রচলিত মূল্যবোধ জড়িত এবং প্রথা সামাজিক নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করে। প্রথা মানব সমাজের সাংগঠনিক কাঠামোকে অটুট রাখে। প্রথা কেবল মানুষের বাহ্যিক আচরণের উপর নয়, মনোজগতেও প্রভাব বিস্তার করে। পৃথিবীর সকল দেশে এবং সকল সম্প্রদায়ে প্রথার প্রচলন পরিলক্ষিত হয়। অনেক দেশ রয়েছে যেখানে প্রচলিত সামাজিক প্রথাগুলিকে অমান্য করার বিষয়ে ঐ দেশের মানুষ ভাবতেও পারে না। মানুষের ব্যক্তিত্ব গঠনেও প্রথার ভূমিকা রয়েছে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions