লোকাচার কি
লোকাচার (Folkways)
সমাজ সম্পর্কিত আলোচনায় একটি বহুলব্যবহৃত এবং প্রচলিত ধারণা হলো লোকাচার। সমাজবিজ্ঞানী সামনারের মাধ্যমে ‘লোকাচার’ শব্দটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। মানুষের জীবন ধারণের ক্ষেত্রে বিভিন্নতা লক্ষ করা যায়। যেমন- খাদ্য গ্রহণ, বাসস্থান, বিবাহ, পোশাক-পরিচ্ছেদ প্রভৃতি যা নানামুখী আচারণের মাধ্যমে গড়ে ওঠে। এ অভ্যাস এবং আচরণ বংশানুক্রমে চলতে থাকে। আর এভাবেই গড়ে ওঠে একটি সমাজের লোকাচার। তাই বলা হয় লোকাচার হলো সমাজস্থ মানুষের আচরণের জন্য স্বীকৃত ও গৃহীত প্রন্থা যা পালন না করলে শক্তির কোন বিধান নাই তবে তাদের প্রতি নিন্দা বা ঘৃণা প্রকাশ করা হয়। যেকোনো সমাজের ঐতিহ্য, চালচলন, পোশাক পরিচ্ছেদ, আদব-কায়দা, রীতিনীতি কেউ পালন না করলে শাস্তি দেওয়া হয় না তবে তাদের প্রতি নিন্দা প্রকাশ করা হয়। লোকাচারের সংজ্ঞা বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে প্রদান করেছেন। যেমন:
ম্যাকাইভার এবং পেজ বলেন, “সমাজে সৃষ্ট ও স্বীকৃত এবং গৃহীত পন্থাই হলো লোকাচার।”
সামনারের মতে, “লোকাচার হচ্ছে গণভিত্তিক ঘটনা, সাদৃশ্যের প্রবাহ, তাদের সংগঠন ও পারস্পরিক অবদান।”
অগবার্ন ও নিমকফ এর মতে “ আদিম সমাজের কতিপয় নির্দিষ্ট অপ্রধান বা কম গুরুত্বপূর্ণ প্রথাকে লোকাচার বলে।”
জিসবার্ট বলেন, “লোকাচার স্বতঃস্ফুর্ত। প্রতিষ্ঠান বা প্রথা অপেক্ষা লোকাচারের অর্থ বিস্তৃত। বর্তমান সমাজে বৈজ্ঞানিক ধারণার বাহিরে যাবতীয় স্বতঃস্ফুর্ত আচরণ ও ব্যবহারবিধি সবই লোকাচারের অন্তর্গত।”
উপরোক্ত সংজ্ঞাগুলোর আলোকে বলা যায় যে, লোকাচার হলো সমাজস্বীকৃত আচরণ যা পালনে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা দৃঢ় হয় এবং পালনে ব্যর্থ হলে কাউকে শাস্তি পেতে হয় না। তবে এমন আচরণ সমাজ প্রত্যাশাও করে না।
লোকাচারের বৈশিষ্ট্যঃ
লোকাচারের কতিপয় বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। যেমন:
(ক) লোকাচার সামাজিক নিন্ত্রণের বাহন হিসেবে কাজ করে ।
(খ) লোকাচার পালনের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সমাজের ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি হয়।
(গ) লোকাচারে সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত হতে হয়।
(ঘ) সামাজিক অভিজ্ঞতা থেকে স্বত:স্ফুর্তভাবে লোকাচার সৃষ্টি হয়।
(ঙ) সমাজস্থ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে লোকাচারের বৈশিষ্ট্য ও পার্থক্য লক্ষ করা যায়।
(চ) লোকাচার মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়।
(ছ) সমাজ পরিবর্তনের সাথে সাথে লোকাচার রীতিতেও পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। তবে তা দ্রুত পরিবর্তন হয় না, পরিবর্তন হয় ধীর গতিতে।
লোকাচারের গুরুত্ব :
লোকাচার সামাজিক নিয়ন্ত্রণের উল্লেখযোগ্য বাহন হিসেবে কাজ করে। লোকাচারের মাধ্যমে সুশৃঙ্খল, স্থিতিশীল, আনন্দঘন জীবনব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। লোকাচারের মাধ্যমে সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের আচার-আচরণের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ পরিলক্ষিত হয়। গ্রামীণ এলাকায় লোকাচারের ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ। গ্রামীণ জীবন সহজ-সরল হওয়ায় বংশ পরম্পরায় লোকাচার পালন হয়ে আসছে। লোকাচার একটি শক্তিশালী সামাজিক মাধ্যম হিসেবেও কাজ করে। তাছাড়া যেকোনো সমাজের লোকাচার ঐ সমাজের সামাজিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে কাজ করে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions