যোগান সূচি কাকে বলে

যোগান সূচি কাকে বলে

যোগান সূচী: কোন দ্রব্যের দাম ও তার যোগানের মধ্যে একটা অপেক্ষিক সম্পর্ক বিদ্যমান। এখন বিভিন্ন দামে যোগানের যে বিভিন্ন পরিমাণ পাওয়া যায় তাকে যখন আমরা একটি ছকের সাহায্যে প্রকাশ করবো তখন তাকে বলে যোগান সূচী।

নিম্নে একটি যোগান সূচীর উদাহরণ দেয়া হল :
আমের যোগান সূচী:
যখন আমের দাম ৪০ টাকা/কেজি তখন আমের যোগান ১০০ কেজি। এখন যদি আমের দাম বেড়ে ৫০ বা ৬০ টাকা হয় তবে যোগানের পরিমাণও বেড়ে ১২০ বা ১৪০ কেজি হবে।

যোগান রেখা

দ্রব্যের দাম ও যোগনের মধ্যে যে আপেক্ষিক সম্পর্ক তাকে যদি আমরা চিত্রে রূপ দেই তবে যোগান রেখা পাব। অর্থাৎ বিভিন্ন দামে দ্রব্যের যে বিভিন্ন যোগান তাকে চিত্রের প্রকাশ করলেই যোগান রেখা পাওয়া যায়।

যোগান রেখা কেন ডান দিকে উর্ধ্বগামী হয়?

কোন দ্রব্যের দাম যখন বাড়ে তখন বিক্রেতার বিক্রয় লব্ধ অর্থের পরিমাণ বাড়ে। উৎপাদক তখন সে দ্রব্য উৎপাদনে বেশী আগ্রহী হয়। এতে উৎপাদনের উপাদানকে ঐ দ্রব্য উৎপাদনেই বেশী নিয়োগ করবে এবং দ্রব্যের উৎপাদনও বাড়বে। অর্থাৎ দ্রব্যের দাম বাড়লে তার উৎপাদন বাড়ে।

অন্যদিকে যদি দ্রব্যের দাম কমে তবে বিক্রেতার বিক্রয়লব্ধ অর্থের পরিমাণ কমে। উৎপাদক তখন আর ঐ দ্রব্য উৎপাদনে আগ্রহী হয় না এবং উৎপাদনের উপাদানকেও ঐ দ্রব্য উৎপাদনে বেশী নিয়োগ করে না। এতে উৎপাদন কম হয়। অর্থাৎ দ্রব্যের দাম কমলে তার যোগানের পরিমাণও কমে।

অতএব দেখা যাচ্ছে যে, দ্রব্যের দাম ও তার যোগানের সঙ্গে এটি সরাসরি বা প্রত্যক্ষ সম্পর্ক বিদ্যমান। এই প্রত্যক্ষ বা ধনাত্মক সম্পর্কের কারণেই যোগান রেখা ডানদিকে উর্ধ্বগামী।

যোগানের পরিবর্তন

যোগানের যে নির্ধারকসমূহের কথা আমরা আলোচনা করলাম তাদের মধ্যে অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত থেকে শুধুমাত্র দামের পরিবর্তনের কারণে যোগানের পরিমাণের যে পরিবর্তন হয় তাকে যোগানের পরিবর্তন বলে। যেমন, ডিমের দাম যখন ১৪ টাকা/হালি তখন ডিমের যোগানের পরিমাণ হয় ২০ হালি, আর ডিমের দাম বেড়ে ১৬ টাকা হলে যোগানের পরিমাণ বেড়ে ২৯ হালি হল। এক্ষেত্রে আমরা একই যোগান রেখা ঝঝ এর উপরে ধ বিন্দু থেকে ন বিন্দুতে যাব। একেই বলে যোগানের পরিবর্তন।

যোগানের স্থিতিস্থাপকতা

অন্যান্য অবস্থা স্থির থাকলে কোন দ্রব্যের দামের পরিবর্তনের সঙ্গে যোগানের পরিমাণও পরিবর্তিত হয়। দামের পরিবর্তনের সঙ্গে যোগানের পরিবর্তনের মাত্রা বিভিন্ন দ্রব্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম। এই দামের পরিবর্তনের সঙ্গে যোগানের সাড়া দেয়ার মাত্রাকে যোগানের স্থিতিস্থাপকতা বলে। স্থিতিস্থাপকতাকে শতাংশিক পরিবর্তনের দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

অতএব আমরা বলতে পারি, দামের আপেক্ষিক বা শতাংশিক পরিবর্তনের ফলে যোগানের যে আপেক্ষিক বা শতাংশিক পরিবর্তন হয় তাকে যোগানের স্থিতিস্থাপকতা বলে।

যোগানের স্থিতিস্থাপকতা নির্ধারক সমূহ

যোগানের স্থিতিস্থাপকতা যে সব বিষয়ের উপর নির্ভর করে সেগুলি নিম্নরূপ -

১। সময় : স্বল্পকাল অপেক্ষা দীর্ঘকালে যোগান স্থিতিস্থাপকতা বেশী। অর্থাৎ যোগান স্থিতিস্থাপকতা সময়ের সাথে বৃদ্ধি পায়।

২। উপকরণসমূহের গতিশীলতা : উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণসমূহকে এক ক্ষেত্র থেকে অন্য ক্ষেত্রে স্থানান্তরের মাত্রা যত বেশী হয় স্থিতিস্থাপকতা তত বেশী হবে।

৩। ঝুঁকি গ্রহণ : উদ্যোক্তাগণ যতই ঝুঁকি আগ্রহী হবে, যোগানের স্থিতিস্থাপকতা ততই অধিক হবে।

Tweet