মোটর যান কাকে বলে
মোটর যান (Motor Vehicle) : স্থলপথে মানুষ অথবা পণ্য পরিবহনের জন্য অথবা সামগ্রী আনা-নেওয়ার জন্য ব্যবহৃত স্বয়ংচালিত যান হলো মোটর যান। এর জন্য রেল-লাইন বা ট্রাম-লাইনের মতো কোনো সুনির্দিষ্ট চলাচল-পদ্ধতির প্রয়োজন হয় না। যাত্রীযান এবং বাণিজ্যিক যানের মধ্যে অনেক কিছুর মিল থাকলেও এগুলো আলাদা ধরনের হয়ে থাকে, মূলত ব্যবহারের উদ্দেশ্যের ভিন্নতার কারণেই যাত্রী-মোটরযান নির্মাণকালে যাত্রীদের আরাম-আয়েশ ও নিরাপত্তার দিকে নজর তৈরি করা হয় প্রাত্যহিক বহুবিধ ব্যবহারের ধকল সহ্য করার দিকে লক্ষ্য রেখে। বাণিজ্যিক মোটরযান বহু প্রকারের হয়ে থাকে।
যাত্রীযানসমূহের মধ্যে রয়েছে মোটরগাড়ি, বিনোদন-যান এবং ঘুমানোর সুযোগ-সুবিধাসহ ক্যাম্পার ও মোটর হোম ইত্যাদি সার্বিক ব্যবহারোপযোগী যান, মোটর বাইক, মোটর সাইকেল, স্কুটার, ট্রেইল বাইক, মরুযান ও তুষারযান ইত্যাদি। বাণিজ্যিক মোটরযানসমূহ হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্স, এয়ারপোর্ট লিমোজিন, ট্যাক্সিক্যাব, বাস, ভ্যান, ট্যাংকার, হালকা ও ভারি ট্রাক, ট্রাক্টর, কৃষিখামার যান, মহাসড়ক ও সড়ক নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত যান, অনুসন্ধান বা কূপ-খনন ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত যান এবং বিভিন্ন ধরনের সামরিক যান।
ইগনিশন সুইচ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মোটরযান চালু হয়। ব্যাটারি থেকে বিদ্যুৎ-প্রাবহ শুরু করা হয় যাতে স্টার্টার মোটর, কাবুরেটর ইঞ্জিন-ক্র্যাংক ঘোরাতে শুরু করতে পারে। একই সঙ্গে ইগনিশন সিস্টেম জ্বালানি দহনের জন্য স্পার্ক-প্লাগসমূহে উচ্চচাপ বিদ্যু-প্রবাহ প্রেরণ করে। সংযোগদন্ডসমূহ পিস্টন থেকে ক্র্যাংকশ্যাফটে শক্তি সরবরাহ করে আর ক্যামশ্যাফট গ্রহণ বা বর্জন ভালভ পরিচালন ও স্পার্ক প্লাগসমূহের ফায়ারিং বিরতিকালের সময় নির্ধারণ করে দেয়। প্রতিটি পিস্টনের শক্তি-অভিঘাতসমূহ ক্র্যাংকশ্যাফট ঘুরাতে থাকে এবং এর ফলে যানটি চলতে শুরু করে। ইঞ্জিনের পাওয়ার-প্লান্ট শক্তি ক্লাচ, ট্রান্সমিশন, ড্রাইভ শ্যাফট ও রিয়ার অ্যাক্সেল-এ প্রেরিত হয়।
ইঞ্জিনের এসব প্রধান উপাংশ ছাড়াও রয়েছে জ্বালানি ব্যবস্থা। এতে রয়েছে জ্বালানি ট্যাংক, জ্বালানি পাম্প পর্যন্ত প্রসারিত জ্বালানি লাইন, ফিল্টার ও কার্বুরেটর। কার্বুরেটরের উপর একটি এয়ার ক্লিনার বসানো থাকে যাতে পর্যাপ্ত পরিস্কার বায়ু সরবরাহ করা সম্ভব হয়।
বর্তমানে প্রচলিত কার্বুরেটর ও ইন-টেক ম্যানিফোল্ড এর পরিবর্তে কিছু মোটরযানে ফুয়েল-ইনজেকশন সিস্টেম ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে প্রতিটি সিলিন্ডারে জ্বালানি সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য মিটার-সংবলিত কম্পিউটার থাকে। এ ব্যবস্থায় দহন ভালো হয় এবং জ্বালানির অপচয় কম হয়।
মোটরযানের নির্গম ব্যবস্থার কারণে তিন প্রকারে দূষণ ঘটে। এগুলির মূল উৎস হচ্ছে জ্বালানি ট্যাংকের গ্যাস, ক্রাংককেইস ধোঁয়া এবং যান থেকে নির্গত ধোঁয়া। এর ফলে বায়ুদুষণ ঘটে। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা মোটরযানের কারণে সংঘটিত দুষণ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরোধের জন্য নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রচলিত খনিজ জ্বালানির পরিবর্তে উদ্ভিজ্জ তেল জ্বালানি ব্যবহারের বিষয়টিও সীমিতভাবে পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। তবে ব্যাটারি চালিত ইঞ্জিন ব্যবহারের পরীক্ষাও সফল হয়েছে। তবে ব্যাটারি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ এখনো বেশি পড়ছে। এজন্য সৌরকোষ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের গবেষণাও পাশাপাশি চলছে। কারিগরি ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে সাফল্য অর্জিত হলেও এখনো পর্যন্ত আর্থিক দিক থেকে এসব উদ্যোগ বাস্তবে ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠেনি।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions