দূরবীণ আবিষ্কার হয় কিভাবে জানেন কি?
দূরবীণ (১৬০৯) গ্যালিলিও (১৫৬৪-১৬৪২)
১৬০৮ সালে লিপারসে নামের ইংলণ্ডের এক চশমা বিক্রেতা ধাতু নির্মিত একটি চোঙের আগায় একটি লেন্স বসিয়ে দূরবীণের মত একটি যন্ত্র তৈরী করেছিলেন। এই যন্ত্র দিয়ে অল্প দূরের কোনো বস্তুকে বড় ভাবে দেখা যেত। যন্ত্রটিকে সকলে খেলনা হিসাবেই গ্রহণ করেছিল।
১৬০৮ সালে গ্যালিলিও এসেছিলেন ভেনিসে। কোপার্নিকাসের মত সমর্থন করে তিনি তখন চর্তুদিকে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছেন। এসময় তার কানে গেল লিপারসের যন্ত্রটির কথা। তিনি ভাবলেন তাহলে তো এভাবে দূরের অনেক জিনিস সম্বন্ধে আমরা অনেক তথ্য জানতে পারব। এই ভাবনা থেকেই তিনি ১৬০৯ সালে ধাতব চোঙের দুদিকে ছোট ও বড় দুধরণের লেন্স বসিয়ে তৈরী করে ফেললেন দূরবীণ। দূরবীণ নিয়ে তিনি আকাশ পর্যবেক্ষণ করে দূরবীণভিত্তিক জ্যোর্তিবিজ্ঞানের সূত্রপাত করেন। বৃহস্পতির চারটি উপগ্রহ, শনিগ্রহের বলয়, শুক্র গ্রহের কলা এসব আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি এই দূরবীণ দিয়েই। | গ্যালিলিয়ান টেলিস্কোপের নানা উন্নতি হয়ে তৈরী হয়েছে বর্তমান যুগের দূরবীণ। বর্তমান যুগের দুরবীণ দু ধরনের। একটি প্রতিসরিত আলোর দুরবীণ, অন্যটি প্রতিফলিত আলোর দূরবীণ। দূরবীণে ব্যবহৃত লেন্স দুধরণের, একটি উত্তল অন্যটি অবতল। উত্তল লেন্সের মাঝখানটা মােটা, কিনারার দিক পাতলা আর অবতল লেন্সে ঠিক উল্টো হয়।
প্রতিসরিত আলোর দূরবীণে একটি ধাতু নির্মিত চোঙের বড় মুখে থাকে বড় উত্তল লেন্স। এটি লক্ষ্য বস্তুর দিকে মুখ করে রাখা হয় তাই এই লেন্সটিকে বলে অবজেক্ট গ্লাস।
চোঙের ছোট মুখে থাকে ছোট উত্তল লেন্স। এটিতে চোখ রেখে দেখা হয় বলে এর নাম আইপিস। বড় ও ছোট লেন্স দুটিকে এমন ভাবে রাখা হয় যাতে উভয়ের ফোকাস এক বিন্দুতে মিলিত হয় ও অক্ষদুটো একই সমতলে থাকে। এই দূরবীণের লেন্সে আলোর প্রতিসরণ ঘটে বলে প্রতিসারিত আলোর দূরবীণ নাম দেওয়া হয়েছে। আমাদের চোখে যতটা আলো পড়ে অবজেক্ট গ্লাসে তার চেয়ে অনেক বেশী আলো পড়ে তাই আকাশের গ্রহদের বড় ও নক্ষত্রদের আরো উজ্জ্বল দেখায়।
প্রতিফলিত আলোর দূরবীণে ধাতব নলে অবতল লেন্স লাগানো হয়। এক পিঠ সমতল অপর পিঠ অবতল কাচ খণ্ডের অবতল পিঠে রূপা বা অ্যালুমিনিয়ামের প্রলেপ লাগিয়ে অবতল দর্পণ তৈরী করা হয় প্রতিফলিত আলোর দূরবীণে নক্ষত্রের আলোকরশ্মি অবতল দর্পণে এসে পড়ে সমস্ত রশ্মি এক সাথে প্রতিফলিত হয়ে দর্পণের ফোকাস বিন্দুতে জড়ো হয়। এভাবে একটি বিন্দুতে সব রশ্মি জড়ো হওয়ায় দুর্বল রশ্মিও জোড়ালো হয়ে যায়, ফলে গ্রহগুলিকে বড় ও নক্ষত্রগুলিকে উজ্জ্বল দেখায়। বর্তমান যুগে প্রতিফলিত আলোর দূরবীণকে অবলম্বন করে তীক্ষ্ণঅনুভূতি সম্পন্ন একটি অবতল আকাশতার ও বেতার গ্রাহক যন্ত্র ব্যবহার করে বেতার দূরবীক্ষণ যন্ত্র তৈরী করা হয়েছে। এই যন্ত্রে মহাকাশ থেকে আসা বেতার তরঙ্গ ধরা পড়ে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions