সূচক সংখ্যা কি?
সূচক সংখ্যা : এক বছরের গড় দামস্তর ওঠানামা তথা অর্থের মূল্য হ্রাস-বৃদ্ধি পরিমাপ করার জন্য যে প্রতীক সংখ্যা ব্যবহার করা হয় তাকে দামস্তরের সূচক সংখ্যা (Price index number)। দামস্তর বা অর্থের মূল্যের পরিবর্তন পরিমাপের উদ্দেশ্যে সূচক সংখ্যা ব্যবহার করা হয়। দামস্তর বাড়লে সূচক সংখ্যা বাড়বে এবং অর্থের মূল্য কমে যাবে। দামস্তর কমলে সূচক সংখ্যা কমবে এবং অর্থের মূল্য বাড়বে। অধ্যাপক ব্লেয়ার এর মতে “সূচক সংখ্যা হল একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ গড়”। অধ্যাপক এক্সটন এবং কাউডেন এর মতে “সূচক হলো পারস্পরিক সম্বন্ধযুক্ত কতগুলো বিষয়ের পার্থক্যের ব্যবধান পরিমাপ করার কৌশল।” একটি অর্থনীতিতে সব কয়টি দ্রব্যের দাম একত্রে বাড়ে বা কমে না। তাই দ্রব্যমূল্যের একটা গড় হিসাব করা হয়। এরূপ গড়পড়তা দামের সমষ্টিকে সূচক সংখ্যা বলা হয়। সুতরাং দামস্তরের পরিবর্তন সময়ের ব্যবধানে প্রকাশ করার মাধ্যম হল সূচক সংখ্যা।
সূচক সংখ্যা গঠন পদ্ধতি
সূচক সংখ্যা গঠন করতে হলে কতগুলো বিশেষ বিষয়ের উপর নজর রাখতে হয়। নিচে তা উল্লেখ করা হলো :
১. ভিত্তি বছর : সূচক সংখ্যা গঠন করতে হলে ভিত্তি বছর ঠিক করে নিতে হয়। যে বছরের সাথে অন্য বছরের দামস্তরের তুলনা করতে হয় তাই হলো ভিত্তি বছর। ভিত্তি বছরকে স্থিতিশীল বছর হতে হবে। যেমন ১৯৭২ সালকে ভিত্তি বছর বলা যাবে না। কারণ এ বছরে দেশ ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি ধ্বংসস্তুপ। দামস্তরসহ প্রায় সকল অর্থনৈতিক চলক স্থিতিশীল ছিল না। তাই ১৯৭৬ সালকে ভিত্তি বছর হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
২. দ্রব্য বিনিময় : সূচক সংখ্যা গঠনের জন্য কতগুলো দ্রব্য নির্বাচন করতে হয়। সাধারণত যে সব দ্রব্য মানুষ ভােগ করে সেই সব দ্রব্য বাছাই করতে হবে। সকল প্রকার দ্রব্য নিয়ে সূচক সংখ্যা গঠন করলে জটিলতা সৃষ্টি হবে তাই সঠিক দ্রব্য বেছে নিয়ে সূচক সংখ্যা গঠন করতে হবে।।
৩. দ্রব্যের দাম : আমরা জানি যে, বাজার ব্যবস্থায় দুটি দাম প্রচলিত আছে। একটি হলো পাইকারী দাম আর অন্যটি হলো খুচরা দাম। কিন্তু সূচক সংখ্যার ক্ষেত্রে পাইকারী দাম ব্যবহার করা হয়।
৪. আপেক্ষিক দাম নির্ণয় : ভিত্তি বছর ও চলতি বছরের আপেক্ষিক দাম নির্ণয় করতে হয়। ভিত্তি বছরের দাম ১০০ টাকা ধরে হিসাবী বছরের দাম এর হ্রাস-বৃদ্ধি শতকরা প্রকাশ করা হয়। যেমন ভিত্তি বছরে চালের দাম ৬০ টাকা হলে তাকে আমরা ১০০ টাকা। হিসেবে প্রকাশ করব। চলতি বছরের দাম ১২০ হলে ২০০% পরিবর্তন হিসেবে দেখাব ভিত্তি বছরের সাথে তুলনার জন্য।
৫. আপেক্ষিক গড় দাম নির্ণয় : ভিত্তি বছরের আপেক্ষিক দামের যোগফলকে দ্রব্যের সংখ্যা দ্বারা ভাগ করে গড় দাম বের করা হয়, এ গড় সর্বদা ১০০ হবে। আর হিসেবী বছরের আপেক্ষিক দামের যোগফলকে দ্রব্য সংখ্যা দ্বারা ভাগ করে গড় সংখ্যা পাওয়া যাবে এটা ১০০ এর চেয়ে বেশি বা কম হবে।
সূচক সংখ্যা নির্ণয়
সূচক সংখ্যা নির্ণয়ের দু'টি পদ্ধতি প্রচলিত আছে। যথা: ১) সাধারণ সূচক সংখ্যা ও ২) গুরুত্ব সংযুক্ত সূচক সংখ্যা।
সাধারণ সূচক সংখ্যা : সকল শ্রেণীর দ্রব্যের সমান গুরুত্ব দিয়ে যে সূচক সংখ্যা প্রকাশ করা হয় তাই হলো সাধারণ সূচক সংখ্যা।
গুরুত্ব সংযুক্ত সূচক সংখ্যা : গুরুত্ব অনুসারে আপেক্ষিক দাম নির্ণয় করে গুরুত্বসংযুক্ত সূচক সংখ্যা বের করা হয়। যে দ্রব্যের গুরুত্ব যত তত দ্বারা গুণ করে সমষ্টিকে গুরুত্বের যোগফল দ্বারা ভাগ করে আমরা গুরুত্বারোপিত সূচক সংখ্যা নির্ণয় করতে পারি।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions