Home » » মুদ্রাস্ফীতি কি?

মুদ্রাস্ফীতি কি?

মুদ্রাস্ফীতি কি?

মুদ্রাস্ফীতির সংজ্ঞা: পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মুদ্রাস্ফীতি একটি অত্যন্ত আলোচিত বিষয়। সাধারণতঃ মুদ্রাস্ফীতি বলতে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধিকে বুঝায়। কিন্তু ক্ষণস্থায়ী দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিকে মুদ্রাস্ফীতি বলা যায় না। তাহলে মুদ্রাস্ফীতি আসলে কি? আসলে মুদ্রাস্ফীতি হলো সময়ের ব্যবধানে দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত বৃদ্ধি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা কম পরিমাণ দ্রব্য একই টাকায় কিনতে পারি। ফলে অর্থের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পায়। অর্থাৎ “মুদ্রাস্ফীতির ফলে অর্থের মূল্যে ক্রমাগত হ্রাস পায়। বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ বিভিন্নভাবে মুদ্রাস্ফীতির সংজ্ঞা দিয়েছেন। 

অর্থনীতিবিদ কেমারার (kemerer) এর মতে, “যখন দেশে মোট মুদ্রার যোগান চাহিদার তুলনায় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে পণ্যসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি করে তখন মুদ্রাস্ফীতি ঘটে।” অর্থনীতিবিদ পল আইন জিন এর মতে “মুদ্রাস্ফীতি” হল ক্রয় ক্ষমতার প্রসারমুখী গতি যা দামস্তরে বৃদ্ধি ঘটায়।” অর্থনীতিবিদ কুলবর্ণ এর মতে “মুদ্রাস্ফীতি হল এইরূপ একটি পরিস্থিতি যেখানে অত্যধিক

পরিমাণ অর্থ অতি সামান্য পরিমাণ দ্রব্য-সামগ্রীর পশ্চাতে ধাবিত হয়।” অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক | পিলুর মতে “যখন আয় অধিক হারে বৃদ্ধি পায় তখনই মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়।” 

সুতরাং “মুদ্রাস্ফীতি” হলো দেশে প্রচলিত দ্রব্যসামগ্রীর ক্রয়ের জন্য যে পরিমাণ অর্থের দরকার হয় তার চেয়ে যদি বেশি মুদ্রার যোগান অর্থনীতিতে প্রচলিত থাকে যা দ্রব্যমূল্যকে ক্রমাগত হারে বাড়ায় ঠিক সেই অবস্থা। অবশ্য দেশে অর্থের যোগান বাড়লেই যে মুদ্রাস্ফীতি হয় এমনটা বলা যাবে না। লর্ড কেইনসের মতে – পূর্ণ নিয়োগ স্তরের পূর্ব পর্যন্ত সত্যিকারের মুদ্রাস্ফীতি ঘটতে পারে না। যতদিন পর্যন্ত দেশে প্রচুর পরিমাণে অব্যবহৃত সম্পদ থাকে ততদিন অর্থের | যোগান বাড়লে দেশে বাড়তি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। ফলে আয় ও উৎপাদন বাড়বে। তাই মূল্যের বৃদ্ধি ঘটে না। কিন্তু কোন সময় যোগানের অসুবিধা থাকলে | আংশিক মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিতে পারে, তবে সাধারণতঃ পূর্ণ নিয়োগস্তরের পূর্বে সত্যিকার মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয় না।


মুদ্রাস্ফীতির প্রকারভেদ : 

এতক্ষণ আমরা মুদ্রাস্ফীতির সংজ্ঞাগত দিক বিবেচনা করেছি। এখন আমরা মূল্যস্তরের বৃদ্ধির হারের উপর নির্ভর করে মুদ্রাস্ফীতিকে দিক দিয়ে কয়েকটিভাবে ভাগ করব :

১. হামাগুড়ি (Creeping inflation) : মুদ্রাস্ফীতির হার ২% এর কম হলে আমরা একে হামাগুড়ি বা ধীর চলা মুদ্রাস্ফীতি বলতে পারি। বাংলাদেশে ১৯৯২-৯৩ সালের এবং ১৯৯৩-৯৪ সালের মুদ্রাস্ফীতি ছিল যথাক্রমে ১.৪% এবং ২%-একে আমরা Creeping inflation বলতে পারি। 

২. Walking inflation : মুদ্রস্ফীতি বৃদ্ধির হার যদি ৮-১০% হয় একে আমরা। walking inflation বলতে পারি। Walking এবং creeping inflation কে আমরা স্বাভাবিক (moderate) মুদ্রাস্ফীতি বলতে পারি। 

৩. ধাবমান মুদ্রাস্ফীতি (Running inflation) : মুদ্রাস্ফীতির হার যদি দুই বা তিন সংখ্যার L অর্থাৎ ২০%, ৫০% বা ১০০%) হয় তবে তাকে আমরা ধাবমান বা Running inflation বলি। ১৯৭০ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ৫০% থেকে ৭০০% এর মধ্যে।

৪. আকাশচুম্বী মুদ্রাস্ফীতি (Hyper inflation) : যখন ক্রয় ক্ষমতা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি চলে যায়, তখন তাকে আমরা Hyper inflation বলি। ১৯২২ এর জানুয়ারি থেকে ১৯২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ১ থেকে ১০,০০০,০০০,০০০। যার ফলে ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পেয়ে প্রায় শূন্যের কাছাকাছি চলে আসে। 


মুদ্রাস্ফীতির কারণ 

এত সময় আমরা মুদ্রাস্ফীতি কি ও এর ধরন ও প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করেছি। স্বাভাবিকভাবেই এখন প্রশ্ন আসতে পারে মুদ্রাস্ফীতি কেন ঘটে ? এর বহুবিধ কারণ আছে। নিম্নে প্রধান প্রধান কারণগুলো আলোচনা করা হলো :

১. অর্থের যোগান বৃদ্ধি : মুদ্রাস্ফীতির প্রধান কারণ হলো অর্থের যোগান বৃদ্ধি। অর্থের যোগান বৃদ্ধি পেলে দামস্তর বাড়ে কারণ অর্থের যোগান বাড়া এবং দ্রব্যের যোগান বাড়ার মধ্যে সব সময় সমতা রক্ষা সম্ভব হয় না। কিন্তু পূর্ণ নিয়োগ স্তরের পূর্বে অর্থের যোগান বাড়লে সাধারণতঃ দামস্তর বৃদ্ধি স্থায়ী হয় না। কিন্তু পূর্ণ নিয়োগ স্তরে অর্থের যোগান বাড়লে দামস্তর বৃদ্ধি স্থায়ীভাবে পায়।

২. সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় : সরকার সাধারণতঃ আয় অপেক্ষা ব্যয় বেশি করে। সরকার যদি জনসাধারণের কাছ থেকে ঋণের মাধ্যমে তা গ্রহণ করে তবে মুদ্রাস্ফীতির সম্ভাবনা থাকে না, কিন্তু যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকট থেকে ঋণ গ্রহণ করে বা বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ করে এবং দেশের অভ্যন্তরে উহা খরচ করে তবে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিতে পারে।

৩. বাণিজ্যিক ব্যাংক কর্তৃক অধিক ঋণ দান : দেশের অর্থের যোগান যদি বৃদ্ধি পায় তবে ব্যাংকের সঞ্চয়ের পরিমাণ বাড়বে এবং ব্যাংকসমূহ ঋণ দিতে উদ্বুদ্ধ হবে। ঋণদান ব্যবস্থা সহজ হলে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিতে পারে।

৪. অর্থের প্রচলন গতি : অর্থের প্রচলন গতি বাড়লে দামস্তর বাড়বে। ভোগ প্রবণতা কমলে অর্থের প্রচলন গতি বাড়ে এবং মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হয়। 

৫. দামস্তর বৃদ্ধির প্রত্যাশা : দাম বাড়বে এ প্রত্যাশা করলে চাহিদা বেড়ে মুদ্রাস্ফীতিকে ত্বরান্বিত করে। অথবা ভবিষ্যত আয় বা মজুরী বাড়বে এই প্রত্যাশা করলে ব্যবসায়ীগণ দামস্তর বাড়াতে পারে বা বিদেশে দ্রব্যের চাহিদা বাড়বে এই আশা করে মূল্যস্তর বাড়াতে পারে।

৬. যুদ্ধের ব্যয় : যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারের প্রচুর অর্থের দরকার হয়। এই ব্যয় মিটানের জন্য সরকার কাগজী নোট ছাপিয়ে এই অর্থ অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় হয় ফলে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়।

৭. প্রাকৃতিক দুর্যোগ : প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলে উৎপাদন হ্রাস পায় এবং অর্থের যোগান নির্দিষ্ট পরিমাণে থাকলে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়।

৮. উৎপাদন ব্যয় : উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেলে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিতে পারে। উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি সাধারণতঃ ঘটে উৎপাদনের উপাদানের ঘাটতি, মজুরি বৃদ্ধি ও খাজনা বৃদ্ধি পেলে যা মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়।

৯. শ্রমের প্রভাব : শ্রমিক সংঘ অনেক সময় মজুরি বৃদ্ধির করার জন্য চাপ দেয় যার ফলে মজুরি বৃদ্ধি করতে হয়। এতে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পায়। যা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে। 

১০. চোরাচাল ও মজুতদারী : কালোবাজারী ও চোরাচালান ইত্যাদি দুর্নীতিপরায়ণ কাজের জন্য কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয় যা যোগান সংকট সৃষ্টি করে মূল্যস্তরকে বাড়ায়।


মুদ্রাস্ফীতির ফলাফল

মুদ্রাস্ফীতি একটি মন্দ ধারণা বলে পরিচিত। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব কম। যেমন ধরুন, বাজার মূল্য ১০% হারে বেড়েছে এবং আপনার বেতন বা মজুরিও একই অনুপাতে বেড়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতির কোন প্রভাব পড়বে না। যে অবস্থাটাকে বিশুদ্ধ (Pure inflation) মুদ্রাস্ফীতির বেলায় দেখা যায়। বাস্তবে এ অবস্থা অনুপস্থিত। মুদ্রাস্ফীতি আসলে নানা রকম প্রভাব ফেলে। চলুন এগুলো জেনে নেয়া যাক :

১. উৎপাদনকারীর উপর প্রভাব : দামস্তর বৃদ্ধির ফলে অর্থাৎ অর্থের মূল্য হ্রাস পেলে উৎপাদনকারী লাভবান হয়। এতে উৎপাদিত দ্রব্য অধিক মূল্যে বিক্রি করে অধিক আয়, মুনাফা ও সঞ্চয় করতে সক্ষম হয়। বিনিয়োগ বৃদ্ধির ফলে নতুন কর্মসংস্থান ও উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে কৃষি ও শিল্প ক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়বে।

২. ভোগকারীদের উপর প্রভাব : মুদ্রাস্ফীতির ফলে ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়। এতে ক্রেতা সমপরিমাণ টাকা দিয়ে কম পরিমাণ দ্রব্য পায়। যার ফলে ক্রয় ও ভোগের পরিমাণ হ্রাস পায়। এর ফলে জীবনযাত্রার মান ও কর্মক্ষমতা হ্রাস পায় এবং এতে জীবনে অভাবঅনটন, রোগ-শোক, অশান্তি নেমে আসে। 

৩. ঋণদাতা ও গ্রহীতার উপর প্রভাব : দামস্তর বাড়লে বা অর্থের মূল্য কমলে ঋণদাতা ক্ষতিগ্রস্ত এবং ঋণ গ্রহীতা লাভবান হবে। যদিও একই পরিমাণ অর্থ দ্বারা ঋণ পরিশোধ হয় তবুও পূর্বের তুলনায় ঋণ পরিশোধকালে অর্থের ক্রয় ক্ষমতা কম থাকে। দ্রব্যের আকারে কম পরিমাণ দিয়ে ঋণ পরিশোধ করায় ঋণ গ্রহীতা লাভবান হয়।

৪. শ্রমিক ও সীমিত আয়ের লোকের উপর প্রভাব : শ্রমিক, বেতনভুক্ত কর্মচারী ও সীমিত আয়ের লোকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মুদ্রাস্ফীতি বাড়লে মজুরি বাড়বে না। ফলে তাদের নির্দিষ্ট আয় দিয়ে কম পরিমাণ দ্রব্য কিনতে পারে। যা তাদের ভোগ, ক্রয় ও জীবনযাত্রার মান কমায়। 

৫. করদাতা ও কর গ্রহীতার উপর প্রভাব : মুদ্রাস্ফীতির ফলে অর্থের মূল্য হ্রাস পাওয়ায় কর দাতা সুবিধা এবং কর গ্রহীতার অসুবিধা হয়। স্বল্প পরিমাণ দ্রব্য বিক্রি করে করদাতা কর দিতে পারে এবং কর গ্রহীতা কম পরিমাণ দ্রব্য কিনতে পারে উক্ত টাকা দ্বারা। 

৬. কৃষকের উপর প্রভাব : মুদ্রাস্ফীতির ফলে কৃষক লাভবান হয় এবং সে তার উৎপাদিত দ্রব্য বিক্রি করে বেশি পরিমাণ দামে বিক্রি করলে আয়, সঞ্চয় ও বিনিয়োেগ বেশি হবে। 

৭. বৈদেশিক বাণিজ্যের উপর প্রভাব : দামস্তর বাড়লে রপ্তানীজাত দ্রব্যের দাম বাড়বে। ফলে রপ্তানী কমবে এবং আমদানী বাড়বে। ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রতিকূল অবস্থা বিরাজ করবে। 

৮. আয় বন্টনের প্রভাব : মুদ্রাস্ফীতির ফলে আয়ের অধিকাংশ অংশ উৎপাদনকারী, বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসায়ীদের নিকট জমা হবে। যার ফলে সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট ও সমাজে শান্তি বিঘ্নিত হবে।

৯. বিনিয়োগকারীর উপর প্রভাব : মুদ্রাস্ফীতির ফলে অর্থের মূল্য হ্রাস পাওয়ায় ঋণপত্র বা বন্ড ক্রেতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগকারীগণ লাভবান হবে। কারণ শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। 

১০. অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপর প্রভাব : অর্থের মূল্য হ্রাস পেলে সাধারণতঃ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। কারণ এতে সমাজের আয়, নিয়োগ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায় যা অর্থনৈতিক

উন্নয়নের জন্য সহায়ক মুদ্রাস্ফীতির অনেক কুফলও আছে। তাই লর্ড কেইন বলেন “মুদ্রাস্ফীতি অন্যায়”, তাই দরকার স্থিতিশীল অর্থনৈতিক অবস্থা। যা হতে পারে সুস্থিতিশীলতা, ভারসাম্য উৎপাদন ও অন্যান্য কাঙ্ক্ষিত উপাদান।


মুদ্রাস্ফীতি প্রতিকারের উপায় 

মুদ্রাস্ফীতি প্রতিকারের ৩টি উপায় রয়েছে। যথা:

১। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের আর্থিক পদ্ধতি। 

২। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের রাজস্ব পদ্ধতি।

৩। মুদ্রাস্ফীতির প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ। 

নিম্নে এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

আর্থিক পদ্ধতি

মুদ্রাস্ফীতির মূল কারণ হলো অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি। সুতরাং মুদ্রাস্ফীতি কমাতে হলে অর্থের পরিমাণ কমাতে হবে। অর্থের পরিমাণ কমাতে হলে ব্যাংক ঋণের পরিমাণ কমাতে হবে। কারণ ব্যাংক ঋণ অর্থের পরিমাণ বাড়ায়। তাই ব্যাংক ঋণ ও অর্থের যোগান কমানোই হলো মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের অন্যতম উপায়। তাই মুদ্রাস্ফীতি রোধের জন্য এই পদ্ধতিসমূহ কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্রহণ করে।

১. ব্যাংক হার বৃদ্ধি : কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে হারে বাণিজ্যিক ব্যাংককে ঋণ দেয় তাকে বলে ব্যাংক হার। ব্যাংক হার বাড়ালে বাণিজ্যিক ব্যাংকে সুদের হার বাড়িয়ে দেয়। এতে বিনিয়োগ ঋণ ও ভোগ ঋণের পরিমাণ কমে যাবে।

২. নগদ জমার অনুপাত বৃদ্ধি : কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর নগদ জমার অনুপাত বাড়ালে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ দানের পরিমাণ কমে যায়।

৩. ঋণপত্র বিক্রি : সরকার খোলা বাজার কার্যক্রমের মাধ্যমে ঋণপত্র বিক্রয় করে জনসাধারণের নিকট নগদ অর্থ তুলে নিতে পারে। নগদ অর্থ কমে যাওয়ার ফলে ঋণদান ক্ষমতা কমে যায়।

৪. নির্বাচনমূলক ঋণ নিয়ন্ত্রণ : এ পদ্ধতির মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এ ক্ষেত্রে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে ঋণ না দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংককে নির্দেশ দেয়।


রাজস্ব পদ্ধতি 

আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারী ব্যয় ব্যবস্থার চেয়ে মুদ্রা ব্যবস্থা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এ কথা সর্বপ্রথম বলেছেলন লর্ড কেইনস। তাই মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সরকারী ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। তাই রাজস্ব পদ্ধতির মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। রাজস্বনীতির উপাদান হল :

১. সরকারী ব্যয় হ্রাস : মুদ্রাস্ফীতির আসল কারণ হলো সরকারের অতিরিক্ত ব্যয়। দেশে যখন মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ বাড়ে তখন সরকারকে তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ খরচ বাদ দিতে হয়। এবং সম্ভব হলে সরকার সমতা বাজেট বা উদ্বৃত্ত বাজেট অবলম্বন করতে হয়।

২. করের পরিমাণ বৃদ্ধি : মুদ্রাস্ফীতি রোধের জন্য সরকারী ব্যয়ের সাথে সাথে বেসরকারী ব্যয়ও হ্রাস করতে হয়। জনসাধারণের উপর আরোপিত করের মাত্রা বৃদ্ধি এবং নতুন নতুন কর আরোপ করলে জনসাধারণের ব্যয়যোগ্য অর্থের পরিমাণ কমে যাবে। রপ্তানী শুল্ক বৃদ্ধি এবং আমদানী শুল্ক হ্রাসের মাধ্যমে বাজারে দ্রবের যোগান বাড়ানো যায়। ফলে মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব কমবে।

৩. সরকারী ঋণ : করের হার বৃদ্ধির পরও জনসাধারণের নিকট বাড়তি ব্যয়যোগ্য অর্থ থাকতে পারে। এক্ষেত্রে সরকার বিভিন্ন মেয়াদী ঋণ গ্রহণ করে বাড়তি ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস করতে পারে।

৪. সঞ্চয় বৃদ্ধি : সুদের হার বৃদ্ধি এবং প্রচারাভিযান জোরদার করলে জনসাধারণের মধ্যে সঞ্চয় প্রবণতা বাড়বে। প্রয়োজনবােধে সরকার বাধ্যতামূলক সঞ্চয় চালু করে জনসাধারণের নিকট থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে।


প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ

উপরে আপনি আর্থিক পদ্ধতি ও রাজস্ব পদ্ধতির মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা জেনেছেন। তাছাড়াও অন্য একটি পদ্ধতিতে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে তা হলো প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ। নিম্নের পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে মুদ্রাস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় :

১. দাম নিয়ন্ত্রণ ও রেশনিং : মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার দ্রব্য মূল্যের সর্বোচ্চসীমা বেধে দিতে পারে এবং ভোগ্যপণ্য সরবরাহ ও রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে পারে।

২. মজুরি নিয়ন্ত্রণ : মুদ্রাস্ফীতির সময়ে শ্রমিকরা বেশি মজুরি পেতে চায়। এতে উৎপাদন ব্যয় এবং উৎপাদন খরচ বাড়ে। এক্ষেত্রে সরকার আইন করে মজুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

৩. উৎপাদন বৃদ্ধি : উৎপাদনের সল্পতার কারণে মুদ্রাস্ফীতি ঘটে। তাই ব্যবহৃত সম্পদের উৎকৃষ্ট ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় এবং কম উৎপাদন ক্ষেত্রে হতে সম্পদ প্রয়োজনীয় ক্ষেত্র স্থানান্তর করে উৎপাদন বাড়ানো যেতে পারে।

৪. ফটকা কারবার নিয়ন্ত্রণ : মুদ্রস্ফীতিতে ফটকা কারবার বাড়ে এবং এতে মূল্যস্তরও বাড়ে। ফটকা কারবার নিয়ন্ত্রণের উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে দামস্তর হ্রাস পাবে।

৫. আমদানী বৃদ্ধি : চাহিদার তুলনায় যোগান খুব কম হলে বাজারের চাহিদা আমদানী দ্বারা মিটানো যায়। এর মাধ্যমে যোগান বাড়ানো মাধ্যমে দাম কমানো যাবে।

৬. প্রচলিত মুদ্রা বাতিল : বিভিন্ন পন্থায় মুদ্রাস্ফীতি রোধ করা না গেলে সরকার প্রচলিত নোট বাতিল করে দিতে পারে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানী এবং স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে কিছু প্রচলিত নোট বাতিল করা হয়েছে।


এই সব পদ্ধতি যৌথভাবে প্রয়োগ করলে মুদ্রস্ফীতি রোধ করা যায়। কিন্তু এককভাবে কোন পদ্ধতি প্রয়োগ করলে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয় না। তাই মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য যুগপৎভাবে রাজস্ব পদ্ধতি, আর্থিক পদ্ধতি ও প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

অফিস/বেসিক কম্পিউটার কোর্স

এম.এস. ওয়ার্ড
এম.এস. এক্সেল
এম.এস. পাওয়ার পয়েন্ট
বাংলা টাইপিং, ইংরেজি টাইপিং
ই-মেইল ও ইন্টারনেট

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ৪দিন)
রবি+সোম+মঙ্গল+বুধবার

কোর্স ফি: ৪,০০০/-

গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স

এডোব ফটোশপ
এডোব ইলাস্ট্রেটর

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ওয়েব ডিজাইন কোর্স

এইচটিএমএল ৫
সিএসএস ৩

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ভিডিও এডিটিং কোর্স

এডোব প্রিমিয়ার প্রো

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৯,৫০০/-

ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স

ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এসইও, গুগল এডস, ইমেইল মার্কেটিং

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ১২,৫০০/-

অ্যাডভান্সড এক্সেল

ভি-লুকআপ, এইচ-লুকআপ, অ্যাডভান্সড ফাংশনসহ অনেক কিছু...

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৬,৫০০/-

ক্লাস টাইম

সকাল থেকে দুপুর

১ম ব্যাচ: সকাল ০৮:০০-০৯:৩০

২য় ব্যাচ: সকাল ০৯:৩০-১১:০০

৩য় ব্যাচ: সকাল ১১:০০-১২:৩০

৪র্থ ব্যাচ: দুপুর ১২:৩০-০২:০০

বিকাল থেকে রাত

৫ম ব্যাচ: বিকাল ০৪:০০-০৫:৩০

৬ষ্ঠ ব্যাচ: বিকাল ০৫:৩০-০৭:০০

৭ম ব্যাচ: সন্ধ্যা ০৭:০০-০৮:৩০

৮ম ব্যাচ: রাত ০৮:৩০-১০:০০

যোগাযোগ:

আলআমিন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

৭৯৬, পশ্চিম কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড,

[মেট্রোরেলের ২৮৮ নং পিলারের পশ্চিম পাশে]

কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬

মোবাইল: 01785 474 006

ইমেইল: alamincomputer1216@gmail.com

ফেসবুক: facebook.com/ac01785474006

ব্লগ: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *